সারাবিশ্বডটকম অনলাইন ডেস্ক: হার্ট রিংয়ের দাম নিয়ে দরকষাকষিতে বিপাকে পড়েছেন রোগীরা। গত সপ্তাহে হার্ট রিংয়ের দাম ৪০ শতাংশ কমিয়ে চিঠি দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দিন থেকেই ইউরোপীয় রিং (স্টেন্ট) আমদানিকারকরা দাম পুনর্নির্ধারণের দাবি জানিয়ে হাসপাতালগুলোকে তাদের রিং ব্যবহার না করার জন্য চিঠি দিয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন রোগীরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এর পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার হাসপাতালগুলোয় শুধু মার্কিন আমদানিকারক কোম্পানিগুলোর রিং ব্যবহার করা হয়েছে। এ রিংয়ের দাম তুলনামূলক বেশি। এ ছাড়া মার্কিন আমদানিকারকদের কাছে সঠিক সাইজের স্টেন্ট না পাওয়ায় রিং না পরিয়ে হাসপাতাল থেকে রোগীর ফিরে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশে ২৭টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের জন্য স্টেন্টের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে মূলত তিন মার্কিন এবং ইউরোপীয়সহ অন্য কিছু দেশের আমদানিকারক রয়েছেন। ইউরোপীয় রিং আমদানিকারকরা বলছেন, এ দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ২০১৭ সালে মার্কআপ ফর্মুলা অনুসরণ করা হয়েছে। আমদানিকারক বাকি ২৪ প্রতিষ্ঠানের স্টেন্টের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে মার্কআপ ফর্মুলা মানা হয়নি। তাই মূল্য নতুন করে সমন্বয় না করা পর্যন্ত স্টেন্ট সরবরাহ ও বিক্রি বন্ধ রেখেছেন তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের এক চিকিৎসক বলেন, রবিবার হার্টের সমস্যা নিয়ে সিরাজগঞ্জ থেকে আসা এক রোগীর এনজিওগ্রাম করা হলে হার্ট ব্লক ধরা পড়ে। হার্টের ব্লক সারাতে তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। তবে তার হার্টে যে সাইজের রিং প্রয়োজন যুক্তরাষ্ট্রের রিং সরবরাহকারী তিন প্রতিষ্ঠানের কাছে সেই সাইজের রিং নেই। এজন্য রোগীকে ক্যাথল্যাব থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। কয়েকদিন পর রোগীকে হাসপাতালে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
?এ হাসপাতালে দিনে ৪০টি হার্টের রিং পরানো হলে অন্তত ২৫টি ইউরোপীয় আমদানিকারকের রিং পরানো হয়। ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো রিং বিক্রি বন্ধ রাখায় যে রোগীর ৬৬ হাজার টাকার রিং পরানো সম্ভাব হতো সাইজ জটিলতায় অনেক ক্ষেত্রে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার রিং পরাতে হচ্ছে তাকে। এতে রোগীর খরচও বেড়ে যাচ্ছে। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দিন বলেন, ‘স্টেন্ট সরবরাহ ও ব্যবহার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে রিংয়ের বাজারে সংকট তৈরি করবে। যুক্তরাষ্ট্রের তিন কোম্পানির রিং দিয়ে কতদিন চলবে। দাম বৈষম্য নিরসনে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। এ বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উদ্যোগ নিতে হবে।’ এপিক টেকনোলজিসের স্বত্বাধিকারী ওয়াসিম আহমেদ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি কোম্পানিকে আইনকানুন মেনে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে কয়েক মাস আগে। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে এ মার্কআপ ফর্মুলার ধার না ধরে সরাসরি একটা প্রাইজ দেওয়া হলো। আমরা যখন বললাম কিসের ভিত্তিতে এ প্রাইজিং? আমাদের সঙ্গে কোনো নিয়ম মানবে না কিন্তু মার্কিন কোম্পানির জন্য সব নিয়ম মেনেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সবাইকে অনুরোধ করছি এখন রিং ব্যবহার না করার জন্য। আমরা প্রোডাক্ট উইথড্র করিনি। শুধু যে বৈষম্য হচ্ছে তার সুরাহা পর্যন্ত ব্যবহার না করার কথা বলছি। আমরা হয়তো ক্ষতি করে একটা-দুইটা দিতে পারব, কিন্তু ৪০০-৫০০ রিং তো দিতে পারব না। ডিজিডিএ বলেছে আমরা রাজি আছি। কিন্তু কোনো প্রমাণ নেই। জোর করে আমাদের ওপর তাদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছে।’ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মুখপাত্র উপপরিচালক নুরুল আলম বলেন, ‘রিংয়ের দামে এ নৈরাজ্য বন্ধ করতে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছি। এর আগে ৪৫ শতাংশ বেশি দামে তো আমদানিকারকরা ব্যবসা করতেন, তা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে উদ্যোগ নিয়েছি। ১৩ জন চিকিৎসকের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি হার্টের রিংয়ের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তারাই সবচেয়ে বেশি হার্টের রোগী দেখেন, তারা জানেন কোন রিং ভালো, কোনটি খারাপ। আমদানিকারকরা আমাদের সিদ্ধান্ত না মেনে রোগীদের জিম্মি করতে পারেন না। তবে তাদের কোনো দাবি থাকলে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন।’হার্টের রিংয়ের ‘বৈষম্যমূলক’ দাম কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাই কোর্ট। এ বিষয়ে করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গতকাল বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। আদালতে রিটকারীদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী বায়েজীদ হোসাইন, নাঈম সরদার ও ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার। দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।