সুনামগঞ্জে কোভিড ল্যাব হচ্ছে

স্বাস্থ্যের ডিজি জানালেন-শিগগিরই ল্যাব চালুর প্রক্রিয়া চলছে

অনলাইন ডেস্ক: হাওরাঞ্চলের রাজধানীখ্যাত সুনামগঞ্জে করোনা টেস্টের অত্যাধুনিক আরটি পিসিআর ল্যাব (কোভিড ল্যাব) স্থাপন করা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার পিসিআর মেশিনটি বরাদ্দ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আনুষাঙ্গিক কাজ শেষে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতাল সুনামগঞ্জে ল্যাবটি চালু হবে। সিলেট নগরীর বাইরে জেলা পর্যায়ে সিলেট বিভাগে এটিই হবে প্রথম কোভিড ল্যাব।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশেদ আলম গতকাল শুক্রবার বিকেলে সিলেটের ডাককে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন , আরটি পিসিআর মেশিন ইতোমধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আরও কাজ করতে হবে। কাজ শেষে মেশিনটি ল্যাবে স্থাপন করা হবে। এরপর সুনামগঞ্জে করোনা টেস্ট শুরু করব। যত দ্রুত সম্ভব আমরা ল্যাবটি চালু করার জন্যে কাজ করছি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে , হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জ জেলায় করোনা ভাইরাস শনাক্তের জন্যে আরটি পিসিআর ল্যাব স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয় ।
আরটি পিসিআর মেশিনটি পেতে সহায়তা দেয় গ্লোবাল ফান্ড। মেশিনটিতে এক সাথে ৩৪০ টি নমুনা টেস্ট করা যাবে। সুনামগঞ্জের কৃতি সন্তান ও সরকারের জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আহমদ পারভেজ জাবীনের প্রচেষ্টায় মেশিনটি বরাদ্দ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। “দি গ্লোবাল ফান্ড” (টিজিএফ) এর সহায়তায় সরকার ৮ টি মেশিন সংগ্রহ করে। ৮ টি মেশিনের মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলার জন্যে বরদ্দকৃত মেশিনটি অন্যতম। বাকী ৭ টি মেশিন দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও জেলায় পর্যায়ক্রমে বরাদ্দ দেয়া হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র জানায় , ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতাল সুনামগঞ্জে মেশিনটি তাৎক্ষণিকভাবে চালু করার কোন ব্যবস্থা নেই। তবে, হাসপাতালের একটি সুবিশাল কক্ষে মেশিনটি স্থাপনের জন্যে নির্ধারণ করা হয়েছে। এই কক্ষে প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ শেষে ল্যাব তৈরি করা হবে। ল্যাবেই স্থাপন করা হবে আরটি পিসিআর মেশিন। এজন্য ইতোমধ্যে ডিজাইনও চূড়ান্ত করা হয়েছে। আজ শনিবার গণপূর্ত বিভাগ ও স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নিকট ডিজাইনটি তুলে দেয়া হবে। এরপর যেকোন বিভাগ ডিজাইন অনুযায়ী মেশিনটি স্থাপন করতে প্রয়োজনীয় কাজ করে দিবে।

জানা গেছে, মেশিনটি চালু করতে হলে একজন মাইক্রোবায়োলজিস্ট , একজন বায়োকেমিস্ট ও ২ জন টেকনিশিয়ান প্রয়োজন। অত্যাধুনিক এই মেশিনটি দিয়ে করোনা টেস্ট শুরু করতে হলে অন্ততঃ এই ৪ জন লোকবল লাগবে। কিন্তু সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে মাইক্রোবায়োলজিস্ট ও বায়োকেমিস্ট নেই। নেই এই মানের দক্ষ টেকনিশিয়ানও। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতাল সুনামগঞ্জের তত্বাবধায়ক ডা. আনিসুর রহমান সিলেটের ডাককে বলেন , আরটি পিসিআর মেশিন বরাদ্দ হয়েছে। এজন্য ল্যাব প্রস্তুত করতে হবে। আমরা ডিজাইন তৈরি করেছি। আজ শনিবার এটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দেয়া হবে। তারা প্রয়োজনীয় কাজ করে দিবেন। জনবলের জন্যে আজ শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি পাঠাব। বেশ কাজ করতে হবে। ল্যাবটি চালু করতে মাস দুয়েক লাগতে পারে। তবে , যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ল্যাব চালুর জন্যে আমার চেষ্টা থাকবে।

দেশের প্রখ্যাত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আহমদ পারভেজ জাবীন সিলেটের ডাককে বলেন , জুলাই মাসের ডাটা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় , প্রতিদিন ১২/১৩ হাজারেরও বেশি রোগী শনাক্ত হন। ২০০ এরও বেশি মারা যাচ্ছেন। শনাক্ত ও মৃত্যুর হার দুটোই বেড়েছে। এমতাবস্থায় কোভিড টেস্ট বৃদ্ধি করা ছাড়া কোন উপায় নেই। টেস্ট বাড়লে – শনাক্ত বাড়বে , রোগী শনাক্ত হলে সংক্রমণও কমে আসবে। সুনামগঞ্জ জেলা হাওরাঞ্চল ও প্রান্তিক জনপদ। অবহেলিত সুনামগঞ্জ জেলাবাসীর স্বাস্থ্য সেবার জন্যে সরকার পিসিআর মেশিনটি বরাদ্দ দিয়েছে। করোনা মহামারির শুরু থেকেই সুনামগঞ্জে ল্যাব স্থাপনের দাবী উঠেছিল। এটি অত্যাধুনিক একটি মেশিন। একসাথে ৩৪০ টি নমুনা পরীক্ষা করা যাবে। ল্যাবটি চালুর পর সুনামগঞ্জ জেলার লোকজন সহজেই জেলার ভেতরে কোভিড টেস্ট করাতে পারবেন। জ্বর-সর্দিকাশি হলেই করোনা টেস্ট করানো জরুরি। এতে ঝুঁকিও কমে আসবে।

সুনামগঞ্জ জেলার জন্যে মেশিনটি বরাদ্দ দেয়ায় তিনি সরকারের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. আবুল কালাম চৌধুরী বলেন , সুনামগঞ্জে করোনা টেস্ট চালু হলে জেলায় রোগী দ্রুত শনাক্ত হবে। এতে সংক্রমণও কমে আসবে। হাওরাঞ্চলে করোনা কমাতে ল্যাবটি কার্যকর ভূমিকা রাখবে। তবে , ল্যাবটি যাতে তাড়াতাড়ি চালু করা যায় এজন্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেন।

জানা গেছে , বর্তমানে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল , শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সীমান্তিকের আরটি পিসিআর ল্যাবে এবং শাহী ঈদগাহের সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের পিবিএইচ ল্যাবে করোনা টেস্ট করা হয়। এই ৪ ল্যাবে পুরো সিলেট বিভাগের করোনার নমুনা টেস্ট করা হয়। সিলেট নগরীর বাইরে শুধুমাত্র সুনামগঞ্জ জেলায়ই স্থাপন হচ্ছে করোনা ভাইরাস টেস্টের ল্যাব। মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলায় এখনো করোনা টেস্টের ল্যাব স্থাপনের কোন খবর পাওয়া যায়নি। তবে , সুনামগঞ্জ , মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতাল ও বিভিন্ন উপজেলা হাসপাতালে এন্টিজেন টেস্টের মাধ্যমেও বর্তমানে করোনা টেস্ট করা হয়।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী , গতকাল শুক্রবার সকাল ৮ টা পর্যন্ত সুনামগঞ্জ জেলায় নতুন করে আরও ৩৮ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস ধরা পড়ে । এ পর্যন্ত জেলার মোট করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ৫৩৪ জন। মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৯৩৬ জন। দেশে করোনা শনাক্তের পর ১৬ মাসে সুনামগঞ্জ জেলায় ৪১ জন রোগী করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

গেল বছরের ১২ এপ্রিল রোববার সুনামগঞ্জ জেলায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। আর গেল বছরের ১ জুন সোমবার সুনামগঞ্জ জেলায় প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী মারা যান। তিনি ছাতক উপজেলার রাউলি গ্রামের বাসিন্দা। এর আগে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা ও ফার্মেসী ব্যবসায়ী ২৮ মে করোনা শনাক্ত হয়। করোনা শনাক্তের পর তাকে দ্রুত সিলেট নগরীর করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে ভর্তি পর তার অবস্থার অবনতি হয়। পরে তিনি মারা যান।

সিলেট বিভাগের প্রথম করোনা রোগীর বাড়িও সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার নাদামপুর গ্রামে। সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন গেল বছরের ৫ এপ্রিল সিলেট বিভাগের প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হন। শনাক্তের ১০ দিনের মধ্যেই ১৫ এপ্রিল রাজধানী ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে তিনি মারা যান। ছাতকের বাসিন্দা গরীবের ডাক্তার খ্যাত সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন সিলেট বিভাগের প্রথম করোনা শনাক্ত ও মৃত্যুবরণকারী রোগী।

.

সূত্র: দৈনিক সিলেটের ডাক।