সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যা আরও ভয়ংকর রূপে

সারাবিশ্বডটকম রিপোর্ট: সুনামগঞ্জে ৯০ সিলেটে ৬০ শতাংশ প্লাবিত । পানি বাড়ছে মধ্যাঞ্চলে । উদ্ধার-সহায়তায় সব বাহিনী । কাল কমতে পারে বৃষ্টি

দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। শুধু শহর বা প্রত্যন্ত অঞ্চলই নয়, অতিবৃষ্টি ও উঁচু অঞ্চল থেকে পানি এলে রাজধানী ঢাকাও প্লাবিত হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম।

সর্বশেষ পাওয়া তথ্যানুযায়ী, উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি ও বন্যায় দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে এ পর্যন্ত ১২ জেলার ৬৪ উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা। বন্যায় সিলেটের ৬০ শতাংশ প্লাবিত হয়েছে। আর সুনামগঞ্জের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ পানিতে ডুবে  গেছে। এসব অঞ্চলে সেনাবাহিনী, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, বিজিবি, বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স, স্থানীয় প্রশাসন ছাড়াও বিভিন্ন মহল উদ্ধার এবং অন্যান্য সহায়তামূলক কাজ করছে।এদিকে গতকাল থেকে সিলেটের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক করা সম্ভব হলেও সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এবং আবহাওয়া অধিদফতর থেকে বলা হয়েছে, উজান ও ভাটিতে পাল্লা দিয়ে নামা বৃষ্টির কারণে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। আগামী ১২ ঘণ্টায় এ বিভাগের বেশির ভাগ জেলায় পানি আরও বাড়তে পারে। তবে কাল মঙ্গলবার থেকে বৃষ্টি কমে বন্যার পানি কমতে পারে। সূত্র জানায়, উত্তরের জনপদ কুড়িগ্রাম দিয়ে ব্রহ্মপুত্রের পানি দ্রুত বাড়ছে। এর প্রভাবে ভাটি এলাকা গাইবান্ধা, রংপুর, নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। আগামী কয়েক দিন সেখানে পানি আরও বাড়তে পারে। বাংলাদেশের উজানের আরেক নদী গঙ্গা অববাহিকায় ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ফলে সেখানে পানি বেড়ে তা আগামী ১২ ঘণ্টার মধ্যে দেশের মধ্যাঞ্চলে প্রবেশ করতে পারে।

নদী ও পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি একযোগে বাড়লে দেশে মাঝারি থেকে বড় বন্যা হয়ে থাকে। কারণ, ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় পানি বাড়লে তা চার থেকে সাত দিনের মধ্যে পদ্মা হয়ে বঙ্গোপসাগরে নেমে যায়। কিন্তু গঙ্গার পানি একই সময়ে বাড়লে তা ব্রহ্মপুত্রের পানির চাপে দেশের উত্তর থেকে মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত পানি আটকে থাকে। ফলে পানি ১০ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এ বছর এ ধরনের বন্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, ব্রহ্মপুত্রের পানি এরই মধ্যে বেড়ে গেছে, গঙ্গার পানি দ্রুত বাড়ছে। অন্যদিকে সিলেটে বন্যার পানি এখনো বাড়ছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, উজানে ভারী বৃষ্টির কারণে দেশের সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে। এর ফলে নতুন করে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনাসহ লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। নতুন করে প্লাবিত হতে পারে টাঙ্গাইল, মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলার নিম্নাঞ্চল। দেশের প্রধান নদ-নদীগুলোর সবকটিতেই পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে ৯টি নদীর ১৮ পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে।

বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে গতকাল আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

সিলেট : প্রায় এক সপ্তাহ ধরে সিলেটে চলছে টানা বর্ষণ। অতিবৃষ্টিতে ধস শুরু হয়েছে পাহাড় ও টিলায়। সিলেট নগরীর টিলাগড়স্থ ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজের ঐতিহাসিক থ্যাকারের টিলায়ও ধস শুরু হয়েছে। গত শনিবার থেকে টিলার মাটি ধসে পড়া শুরু হয়েছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে এমসি কলেজের অধ্যক্ষের শতবর্ষের পুরনো বাংলোটি। গতকাল সরেজমিন দেখা গেছে, বাঁশ পুঁতে টিলাধস ঠেকানোর চেষ্টা করছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে। বাসাইল উপজেলার বাসাইল দক্ষিণ পাড়া-বালিনা সড়কের একটি অংশ পানির তীব্র স্রোতে ভেঙে গেছে। ফলে বন্যার পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। গতকাল জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সকালে যমুনা নদীর পানি টাঙ্গাইল সদর উপজেলার পোড়াবাড়ী পয়েন্টে ৩০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ঝিনাই নদীর পানি জোকারচর পয়েন্টে ১৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এ ছাড়াও ধলেশ্বরী নদীর পানি এলাসিন পয়েন্টে ২২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে নদীভাঙন অব্যাহত আছে।

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। গতকাল বিকাল ৩টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৩৮ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার এবং ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ৩১ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তবে তিস্তা নদীর পানি ব্রিজ পয়েন্টে ২৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে বইছিল।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, নাগেশ্বরীতে বেড়িবঁাঁধের ৫০ মিটার ওয়াশ আউট হয়ে গেছে। এ ছাড়া দুধকুমার নদের কালিগঞ্জ, বামনডাঙ্গা ও ধাউরারকুটি এলাকায় বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।