সারাবিশ্বডটকম নিউজ ডেস্ক: একটি সিকিউরিটিজ কোম্পানিকে শেয়ার কেনার জন্য ৬৭০ কোটি টাকা ঋণ দিতে চেয়েছিল সাউথইস্ট ব্যাংক। বেসরকারি এ ব্যাংকের সর্বশেষ পর্ষদ সভায় ঋণ প্রস্তাবটি পাস হয়েছিল। কিন্তু প্রস্তাবটি পর্ষদ সভায় উপস্থাপন ও পাসের প্রক্রিয়া অস্বচ্ছ হওয়ায় সেটি আটকে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস বিভাগের (এফআইসিএসডি) পক্ষ থেকে রোববার ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) কাছে এ-সংক্রান্ত চিঠি দেয়া হয়। ওইদিনই বিভাগটির পক্ষ থেকে সাইথইস্ট ব্যাংকে বিশেষ পরির্দশন চালানো হয়েছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শক দলের প্রধান ছিলেন এফআইসিএসডির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ জাকির হোসেন। তার স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯৯১-এর ৪৪ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে সাইথইস্ট ব্যাংকে বিশেষ পরিদর্শন চালানো হচ্ছে। চলমান এ পরিদর্শনের সুবিধার্থে ২০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ব্যাংকের ৭২১তম পরিচালনা পর্ষদ সভার ৯ নং এজেন্ডায় অনুমোদিত সিকিউরিটিজ কোম্পানির ঋণটি পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত কোনো অর্থ ছাড় না করার জন্য অর্থাৎ সিকিউরিটিজ কোম্পানির মাধ্যমে কোনো স্টক ক্রয় না করার জন্য আপনাদের পরামর্শ দেয়া হলো।’
এ বিষয়ে কথা বলতে বারবার চেষ্টা করেও সাউথইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নুরুদ্দিন মো. ছাদেক হোসাইনের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। একাধিকবার তাকে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে ব্যাংকটির সংশ্লিষ্ট বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শক দলের প্রধানের দেয়া চিঠি তারা পেয়েছেন। বিষয়টি ব্যাংকের চেয়ারম্যান, এমডিসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও সাইথইস্ট ব্যাংকের একাধিক সূত্রের তথ্যমতে, ২০ ফেব্রুয়ারি সাউথইস্ট ব্যাংকের পর্ষদ সভা চলাকালে হঠাৎ করেই একটি সিকিউরিটিজ কোম্পানিকে ৫০ কোটি টাকা ঋণ দেয়ার প্রস্তাব তোলা হয়। পর্ষদের সভা চলাকালেই প্রস্তাবটি কয়েক দফায় সংশোধন করে সে ঋণকে ৫৭০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। পর্ষদ সভা শেষে নথি চূড়ান্ত করার সময় ঋণের পরিমাণ আরো ১০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে দেয়া হয়। সব মিলিয়ে ওই সিকিউরিটিজ কোম্পানির বিপরীতে সাউথইস্ট ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৭০ কোটি টাকায়। সাউথইস্ট ব্যাংকের পক্ষে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পাশাপাশি তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির শেয়ার কেনার জন্য ঋণটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
পর্ষদের রীতিনীতি মেনে বড় অংকের ওই ঋণ অনুমোদন না হওয়ায় এ নিয়ে ব্যাংকের ভেতরেই বিতর্ক তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কানে যায়। এ অবস্থায় রোববার জরুরি ভিত্তিতে সাউথইস্ট ব্যাংকে বিশেষ পরিদর্শক দল পাঠানো হয়। এফআইসিএসডির পক্ষ থেকে যাওয়া পরিদর্শক দলটি প্রায় সারা দিনই ব্যাংকটিতে অবস্থান করে। অনিয়মের সত্যতা পাওয়ায় দিনের শেষভাগে সাউথইস্ট ব্যাংক এমডিকে পর্ষদে অনুমোদিত ঋণটি ছাড় না করতে চিঠি দেয়া হয়।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে গতকাল সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলমগীর কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বর্তমানে তিনি থাইল্যান্ডে অবস্থান করছেন। সেখান থেকে গতকাল তিনি হোয়াটসঅ্যাপ মারফত বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক যদি এ ধরনের কোনো চিঠি দিয়ে থাকে তা অ্যাবসলিউটলি রং। আমরা সিকিউরিটিজ কোম্পানিটিকে সাউথইস্ট ব্যাংকের প্যানেল ব্রোকারেজ হাউজ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছি। ব্যাংকের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটি শেয়ার কিনবে। আমরা যেসব শেয়ার কিনতে বলব, সেগুলোই তাদের কেনার কথা। এখানে ঋণ দেয়ার কোনো প্রশ্ন নেই।’