শিশু আয়ানের মৃত্যু: শাস্তি-ক্ষতিপূরণ নিশ্চিতে তদন্তের নির্দেশ

খতনার জন্য অজ্ঞান করা শিশু আয়ান আহমেদ আর ফেরেনি। সংগৃহীত ছবি।

সারাবিশ্বডটকম অনলাইন ডেস্ক: সুন্নতে খৎনার ঘটনায় পরিবারের বিনা অনুমতিতে ভুক্তভোগী শিশুর পুরো শরীরে অ্যানেসথেসিয়া প্রয়োগ ও শিশুর মৃত্যু ঘটনা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ও মর্মান্তিক। চিকিৎসকের অবহেলা বা ভুল চিকিৎসার কারণে কারও মৃত্যু বা অন্য কোনো ধরনের ক্ষতি মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।

অভিযোগের নিবিড় তদন্তপূর্বক সত্যতা যাচাই করে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তি এবং একই সঙ্গে ক্ষতিপূরণ আদায় করা আবশ্যক। অভিযোগের বিষয়টি তদন্তপূর্বক অনতিবিলম্বে কমিশনে প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে (স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ) নির্দেশ দিয়েছে সংস্থাটি।

সোমবার (৮ জানুয়ারি) এ সংক্রান্ত এক আদেশ নামা জারি করেছে মানবাধিকার কমিশন।

কমিশন চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদের সই করা আদেশে বলা হয়েছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ‘বাঁচানো গেল না সুন্নতে খৎনা করাতে গিয়ে মৃত্যুর মুখে থাকা সেই আয়ানকে’— শীর্ষক সংবাদের প্রতি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। 

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, গত ৩১ ডিসেম্বর সুন্নতে খৎনার জন্য রাজধানীর বাড্ডার মাদানী অ্যাভিনিউয়ে অবস্থিত ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় নার্সারি পড়ুয়া শিশু আয়ানকে। খৎনা করাতে সাধারণত লোকাল অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া হয়। কিন্তু অভিযোগ ছিল, তাকে পুরো শরীর অ্যানেসথেসিয়া দেন চিকিৎসকরা। পুরো শরীর অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার সময় তাদের অনুমতি নেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর আর জ্ঞান ফেরেনি আয়ানের।

তার বাবা শামীম আহমেদ জানান, গত ৩১ ডিসেম্বর ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর প্রথমে অ্যানেসথেসিয়া করা হয়। ওই অবস্থায় তাকে রেখে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের এক ঘণ্টা ক্লাস নেওয়া হয়। শেষের দিকে পালস না পাওয়ায় ডাক্তাররা আয়ানের বুকে বারবার চাপ দিচ্ছিলেন। কিছুক্ষণ পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে গুলশান-২ নম্বরের ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। চারদিন তাকে পিআইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। 

তিনি আরও বলেন, আমরা রিপোর্ট কাগজপত্রসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি তাৎক্ষণিক ইউনাইটেড হাসপাতালে অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের সেই চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেন। শিশুটির ক্ষেত্রে ভুল অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন বলে আমরা জেনেছি। ওর ক্ষতি হলে পুরো দায় ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। 

রোববার (৭ জানুয়ারি) রাত ১১টা ২০ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সে। মৃত্যুর ব্যাপারে আয়ানের বাবা শামীম আহমেদ চিকিৎসকদের গাফিলতিকে দায়ী করেছেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, এতদিন তারা মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে তালবাহানা করছিল। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন। বাবা শামীম আহমেদ আরও বলেন, গত ৩১ ডিসেম্বর খৎনা করানোর পর থেকেই বাচ্চার আর সেন্স ফেরেনি। তারা ঠিকমত কোনো তথ্যও দেয়নি। এখন মৃত ঘোষণা করল।

অভিযোগ অনুযায়ী, সুন্নতে খৎনার ঘটনায় পরিবারের বিনা অনুমতিতে ভুক্তভোগী শিশুর পুরো শরীরে অ্যানেসথেসিয়া প্রয়োগ এবং এর ফলে শিশুর মৃত্যুর বিষয়টি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ও মর্মান্তিক। 

কমিশন মনে করে, চিকিৎসকের অবহেলা বা ভুল চিকিৎসার কারণে কারও মৃত্যু বা অন্য কোনো ধরনের ক্ষতি মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। অভিযোগের নিবিড় তদন্তপূর্বক সত্যতা যাচাই করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তি এবং একই সঙ্গে ক্ষতিপূরণ আদায় করা আবশ্যক। অভিযোগের বিষয়টি তদন্তপূর্বক অনতিবিলম্বে কমিশনে প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য সচিব, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে বলা হলো। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।