শান্তিগঞ্জের পাখিমারা হাওরে নৌকাবাইচ দেখতে লাখো মানুষের ঢল, আনন্দের একদিন

সারাবিশ্বডটকম অনলাইন ডেস্ক: আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য নৌকাবাইচ দেখতে সকাল থেকেই সব বয়সের লাখো নারী-পুরুষ ভীড় করতে থাকেন শান্তিগঞ্জ উপজেলার বীরগাঁও পাখিমারা হাওরের চারপাশে। নৌকাবাইচ দেখতে দুর-দুরান্ত থেকে নৌকা নিয়ে আসতে থাকে দর্শকরা। তিল ধারণের ঠাঁই নেই কোথাও।

বৃহস্পতিবার (০৯ সেপ্টেম্বর) দিনব্যাপী পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নবাসী কর্তৃক আয়োজিত নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতায় প্রায় ২০ টি নৌকা অংশ নেয়। নদীর ঢেউয়ের তালে তালে বৈঠার চলাৎ চলাৎ শব্দ আর সারিগানের সাথে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের বাজনায় এগিয়ে চলে একেকটি নৌকা। কার আগে কে শেষ সীমানায় পৌঁছে প্রতিযোগিতায় জিতবে তা নিয়ে ব্যস্ত বাইচালরা। দীর্ঘদিন করোনায় ঘরবন্ধী থাকার পর এমন আয়োজন দেখে মুগ্ধ দর্শকরাও।

নৌকাবাইচ দেখতে আসা একাধিক দর্শক বলেন, দীর্ঘদিন পর ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ দেখে খুব ভালো লাগছে। বিশেষ করে করোনা ভাইরাসের কারণে সবাই যখন দিশাহারা সেই সময়ে মানুষকে আনন্দ দিতে নৌকাবাইচের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। লাখের অধিক মানুষ নেচে-গেয়ে দিনটি উপভোগ করেছেন। এতো সুন্দর আয়োজনের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ। 

এদিকে নৌকাবাইচে অংশ নিতে পেরে খুশি বাইচালরাও। শফিক নামে এক বাইচাল বলেন, দীর্ঘদিন পর নৌকাবাইচে অংশ নিতে পেরে আমরা খুবই খুশি। আমাদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্ঠার মাধ্যমে এখানে নৌকাবাইচ দেখতে আসা দর্শকদের কিছুটা হলেও আনন্দ দিতে পেরে আমরাও আনন্দিত।

সিলেট বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিযোগীতায় অংশ নেওয়া ২০টি নৌকাকে হারিয়ে সম্মিলিতভাবে প্রথম স্থান অর্জন করে দর্গাপাশা ইউপি চেয়ারম্যান মনির উদ্দিনের পবন কাষ্টের নৌকা ও জগন্নাথপুরের কাঠগলই। রানার্স আপ হয় আয়োজক বীরগাঁওয়ের নৌকা বীরপবন। এছাড়া তৃতীয় স্থান অধিকার করে সফলের নৌকা।

সবশেষে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নুর হোসেনের সঞ্চালনায় সভায় সম্মিলিতভাবে প্রথম স্থান অর্জনকারী পবনকাষ্ট ও কাঠগলই নৌকার মালিকের হাতে পুরষ্কার হিসেবে দু’টি সোনার নৌকা, দ্বিতীয় স্থান অধিকারী বীরপবন নৌকার মালিকের হাতে ২ টি রঙ্গিন টেলিভিশন ও তৃতীয় স্থান অধিকারীকে ২টি খাসি পুরষ্কার দেন অথিতিবৃন্দ।

এসময় প্রধান অথিতির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম. এ মান্নান বলেন, নতুন প্রজন্মকে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে এমন আয়োজন প্রতিবছর করা জরুরী। এমনকি ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচের এমন আয়োজন অব্যাহত রাখতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, সুনামগঞ্জে নৌকাবাইচের আয়োজন অব্যাহত রাখতে সরকারের নজরে আনতে চেষ্টা করবো।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি নুরুল হুদা মুকুট ,অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক আল ইমরান রুহুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হায়াতুন নবী সায়েম, শান্তিগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ, শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার উজ জামান, শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি কাজী মোক্তাদির হোসেন, জগন্নাথপুর উপজেলার আওয়ামীলীগ সভাপতি আকমল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজু, সুনামগঞ্জ জেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক আসাদুজ্জামান সেন্টু, পরিকল্পনামন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী হাসনাত হোসেন, শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাষক নূর হোসেন, সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটি’র সভাপতি লতিফুর রহমান রাজু প্রমুখ।