সারাবিশ্বডটকম নিউজ ডেস্ক: সন্ধ্যা নামলেই যেন মশার রাজত্ব! মশার কয়েল জ্বালিয়ে, মশা বিতাড়ক স্প্রে ছিটিয়ে, গায়ে এন্টিমসকিটো ক্রিম বা লোশন লাগিয়েও মশার উপদ্রব থেকে রেহাই মিলছে না। হঠাৎ করে যেন কয়েকগুণ বেড়ে গেছে মশা। রাজধানীর উত্তরা, বসুন্ধরা, ভাটারা ও বাড্ডা এলাকার বাসিন্দারা এই অভিযোগ করেছেন। এই এলাকাগুলোতে সিটি করপোরেশনের মশকনিধন কর্মীরা নিয়মিত মশার কীটনাশক প্রয়োগ করছেন না বলেও তারা জানিয়েছেন। এলাকাগুলোয় ডোবা-নালাও নিয়মিত পরিষ্কার করা হচ্ছে না। এসব এলাকার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, সম্প্রতি তাদের আশপাশের অনেকেই এডিস মশা বাহিত রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।
রাজধানীর এ এলাকাগুলোতে মানুষকে মশা থেকে সুরক্ষা সেবা দেওয়ার দায়িত্ব ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি)। এই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, কর্মীরা মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতিদিন সকালে খাল ও নালায় ৪০ লিটার টেমিটস ও এক হাজার লিটার ম্যালেরিয়া অয়েল বি নামের কীটনাশক প্রয়োগ করছেন। আর বিকালে প্রতিদিন ৩৫শ’ লিটার ম্যালাথিয়ন নামে কীটনাশক ফগিং করছেন।
আরও জানা গেছে, উত্তর সিটি ২০২২-২৩ সালের বাজেটে মশক নিয়ন্ত্রণ খাতে ৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে। আর গত অর্থবছরে এ খাতে ৮৫ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের ৫৪টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে গড়ে ১২ থেকে ১৫ জন মশক নিধন কর্মী ও দুই জন করে সুপারভাইজার প্রতিদিন কাজ করছেন। কিন্তু বাসিন্দারা অভিযোগ করছেন, তারা সুফল পাচ্ছেন না।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে, ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা এ বছর ১৬৭ ছাড়িয়েছে। এই বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ৪২ হাজার ১৯৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ছাড়া পেয়েছেন ৩৮ হাজার ২৯৫ জন।
রাজধানীর ভাটারা এলাকার বাসিন্দা ও বেসরকারি চাকরিজীবী মনির হোসেন বলেন, সন্ধ্যার পর ছেলেমেয়েদের নিয়ে মশার যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে যাই। মশার ভয়ে সন্ধ্যার আগেই দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখি। তাতেও কাজ হয় না। এখানে মনে হয় মশারই রাজত্ব।
তিনি আরও বলেন, সিটি করপোরেশনের মশকনিধন কর্মীদের মাঝে মধ্যে দেখি আবার খবর থাকে না। কই যায় কে জানে। এদের কোনও জবাবদিহিতা নাই। কেন যে আমরা সিটি করপোরেশনকে কর দেই। আর টাকা কোথায় খরচ হয় আমরা কেউ জানি না।
অভিজাত আবাসিক এলাকা বসুন্ধরার বাসিন্দা শামিম ইসলাম বলেন, সেদিন এভারকেয়ার হাসপাতালের পাশে এক বন্ধুর সঙ্গে কথা বলছিলাম। মুহূর্তেই বড় বড় মশা আমাদের ঘিরে ধরে। একেকটা মশার কামড়ে অসহ্য যন্ত্রণা। ঘরে ভেতরে দরজা-জানালা বন্ধ করে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়ে খুব বেশি কাজ হয় না। বাসায়ও মশা, বাইরেও মশা।
একই অভিযোগ মধ্য বাড্ডার আদর্শনগর এলাকার বাসিন্দা জাহিদ হাসান বাবুর। এ এলাকাটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় ছেলেমেয়েরা মশার যন্ত্রণায় সন্ধ্যার পর ঠিকমতো পড়াশুনা করতে পারে না। মশার কামড়ে এলাকার অনেকেরই ডেঙ্গু হয়েছে। বিষয়টি কেউ দেখছে না।
কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছেন কি না জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, যারা এলাকার কর্তৃপক্ষ, কাউন্সিলর তারা কি মশার কামড় খাচ্ছে না। তাদের আবার বলতে হবে কেন? কাউন্সিলর সাহেবকে কল করলেও তিনি ফোন ধরেন না। তাদেরই তো আমাদের জিজ্ঞেস করার কথা। আমরা কি ট্যাক্স দেই না?
তিনি আরও বলেন, সন্ধ্যার পর হাতিরঝিল কিংবা গুলশান লেক পাড়ে কোথাও একটু বসা যায়। মনে হয় মশায় উড়িয়ে নিয়ে যাবে।
বিষয়টি জানতে উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলমকে কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
জিজ্ঞেস করা হলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা ইমদাদুল হক বলেন, আমাদের মশক কর্মীরা নিয়মিত কাজ করছেন। তাদের নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। তারা যখন বিকালে ফগিং করে তখন শব্দ হয়। মানুষ বুঝতে পারে কাজ হচ্ছে। কিন্তু মূল কাজটা যখন সকালে হয় তখন শব্দ হয় না।তাই আমরা তাদের মনিটরিং করার জন্য ঘণ্টা কিনে দিয়েছি। কাজ করতে করতে তারা ঘণ্টা বাজাবে। তিনি আরও বলেন, কেউ যদি ঠিকানা দেয় এখানে কাজ হয়নি আমরা এই ঠিকানা ধরে কাজ করবো।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, আজও আমরা উত্তরায় মশকনিধন কার্যক্রম চালিয়েছি। দুটি নির্মাণাধীন ভবন মালিককে আমরা ছয় লাখ টাকা জরিমানা করেছি। সিটি করপোরেশন সব সময় সবাইকে সম্পৃক্ত করে কার্যক্রম করার উদ্যোগ নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সিটি করপোরেশন বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে। পাশাপাশি মানুষ মানুষও সচেতন হচ্ছে। আশা করা যায় মশা কমবে। আমরা খুবই গুরুত্ব দিয়ে খাল ও নালাগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা শুরু করেছি। পরিষ্কার করার পর সেগুলোতে কেরোসিন ও কীটনাশক প্রয়োগ করা হচ্ছে।