বাসস পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান মরতুজা আহমদ

ছবি: সংগৃহিত।

সারাবিশ্বডটকম নিউজ ডেস্ক: সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার মরতুজা আহমদ কে চেয়ারম্যান করে জাতীয় বার্তা সংস্থা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা’র (বাসস) নতুন পরিচালনা বোর্ড গঠন করেছে সরকার। বৃহস্পতিবার এক গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা আইন অনুসারে আগামী তিন বছর এই সংস্থার কর্ম পরিচালনার দায়িত্ব পালনের জন্য গণমাধ্যম ও সরকারি প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার মরতুজা আহমদের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের পরিচালনা বোর্ড গঠন করা হয়েছে। মরতুজা আহমদ একজন সাবেক সচিব।
বাসস’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ তার পদাধিকারবলে বাসস পরিচালনা বোর্ডের ডি-ফ্যাক্টো সদস্য সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালস করবেন।
বাসস বোর্ডে মেইনস্ট্রিম গণমাধ্যমের প্রতিনিধিত্ব করবেন- দৈনিক ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, দ্য পিপলস লাইফ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম ভূইয়া, চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক এবং ৭১ মিডিয়া লিমিটেড’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল হক। 
বোর্ডে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন- যুগ্ম সচিব (প্রেস) তথ্য ও স¤প্রচার মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজন প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজন প্রতিনিধি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজন প্রতিনিধি, তথ্য অধিদপ্তরের প্রধান তথ্য অফিসার (পিআইও)। 
বোর্ডে বার্তা সংস্থার সাংবাদিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রতিনিধিত্ব করবেন-বাসসের বিশেষ প্রতিনিধি মাহফুজা জেসমিন। 
মরতুজা আহমদের জন্ম ১৯৫৭ সনের ২৩শে ডিসেম্বর সিলেট শহরে। তাঁর বাড়ি ধর্মপাশা উপজেলার চাপাইতি গ্রামে। তাঁর পৈতৃক নিবাস সুনামগঞ্জ পৌর শহরের হাছননগরের উপত্যকা আবাসিক এলাকায়। তাঁর পিতা মরহুম আজিজ উদ্দিন আহমদ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রাক্তন সহকারী পরিচালক। সুনামগঞ্জে তিনি প্রাক্তন ডি.আই সাহেব হিসেবে পরিচিত। মাতা প্রয়াত সুফিয়া আখতার খানম।
পিতার চাকুরিজনিত কারণে মরতুজা আহমদের শিক্ষা জীবন বিভিন্ন স্থানে অতিবাহিত হয়েছে। তিনি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল শহরে অবস্থিত চন্দ্রনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৭ সনে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। এরপর শ্রীমঙ্গল ভিক্টোরিয়া হাই স্কুলে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। নবম ও দশম শ্রেণি মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন এবং একই বিদ্যালয় হতে ১৯৭৩ সনে এস.এস.সি পরীক্ষা পাশ করেন। 
মরতুজা আহমদ গোপালগঞ্জ সরকারি মহাবিদ্যালয় থেকে ১৯৭৫ সালে এইচ.এস.সি পাশ করেন। অত:পর নেত্রকোণা সরকারি মহাবিদ্যালয় হতে বি.এ পাশ করেন এবং সমগ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় ৪র্থ স্থান অর্জন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী সাহিত্যে অধ্যয়ন করেন এবং ১২তম স্থান অর্জন করে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। 
শিক্ষা জীবন সমাপ্তির পরপর কিছুদিন কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার হাসানপুর এম.এ সামাদ মহাবিদ্যালয়ে (বর্তমানে সরকারি) অধ্যাপনা করেন। অত:পর ১৯৮৩ সালে বিসিএস সম্পন্ন করে কুমিল্লা কালেক্টরেটে সহকারী কমিশনার ও ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগদান করেন। তিনি বিভিন্ন জেলায় ও উপজেলায় সহকারী কমিশনার, উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট, আর ডি সি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি একাধারে প্রায় ৫ বৎসর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।  
মরতুজা আহমদ উপ-সচিব হিসেবে মৎস্য ও পশু সম্পদ মন্ত্রণালয়ে, যুগ্ম-সচিব হিসেবে ভূমি মন্ত্রণালয়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে এবং অতিরিক্ত সচিব হিসেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় বিশ্ব ব্যাংকের সাহায্যপুস্ট পি.এল.সি-১ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক, প্রেষণে বাংলাদেশ বেতারের পরিচালক (প্রশাসন) এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ গাজীপুর ক্যান্টনমেন্টের ক্যান্টনমেন্ট এক্জিকিউটিভ অফিসার ও ডাইরেক্টরেট অব মিলিটারি ল্যান্ড এন্ড ক্যান্টনমেন্ট এর সর্বোচ্চ পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি তথ্য ও স¤প্রচার মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিবও ছিলেন।
মরতুজা আহমদ  দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ এবং আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছেন। সে সুবাদে তিনি যুক্তরাজ্য, জার্মান, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, ইটালি, জাপান, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, ইরান, শ্রীলংকা, ভিয়েতনাম, চীন, ভারত মালদ্বীপ ইত্যাদি দেশে ভ্রমণ করেন। তিনি ১৯০৫ সনে হজ্জব্রত পালন করেন। 
মরতুজা আহমদের স্ত্রী নাছিমা শামীম খান চৌধুরী এম.এস.সি (পদার্থ বিজ্ঞান, ঢা: বি:), বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন অথরিটির একজন কর্মকর্তা। তাঁর বড় ভাই ফারুক আহমদ এম.এ (ইংরেজী, ঢা: বি:), এল.এল.বি সুনামগঞ্জ শহরে আইন পেশায় নিয়োজিত। তাঁর ছোট ভাই ড: মুশতাক আহমদ সিলেট শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ও এনভায়রনমেন্ট ডিপার্টমেন্টের একজন অধ্যাপক। 
অবসর সময়ে মরতুজা আহমদ বই পড়েন ও টিভি অনুষ্ঠান দেখেন। বিভিন্ন দর্শণীয় ও ঐতিহাসিক স্থানে ভ্রমন তার অন্যতম আকর্ষণ। তিনি বাংলাদেশের প্রায় সব ক’টি জেলাই ভ্রমণ করেছেন।