সারাবিশ্বডটকম নিউজ ডেস্ক: বর্ষাকাল বিদায় নিয়েছে। হেমন্ত আসতেই দেশে ঢুকছে উত্তুরে হিমেল হাওয়া। কমতে শুরু করেছে দিন ও রাতের তাপমাত্রা। কুয়াশার চাদর ঢেকে নিচ্ছে গ্রামের ভোর-সন্ধ্যার প্রকৃতি। শিশির ভেজা ঘাস, শেষ রাতের ঠান্ডা বাতাস আর কুয়াশার আবেশ জানান দিচ্ছে—শীত এলো বলে! ভোর রাতে হালকা কম্বল বা চাদর গায়ে মুড়ে না দিলে ওম-উষ্ণতা মিলছে না। গ্রামে শীতের কাপড় নিয়ে অনেককেই বেরুতে দেখা যাচ্ছে বিকালে। আলমিরায় বন্দি থাকা গরম কাপড়গুলো আলনায় স্থান ঠাঁই নিচ্ছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত কয়েক দিন ধরেই দিনের তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে। আর রাতের তাপমাত্রা নেমে আসছে ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে। গতকাল সোমবার দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চাঁদপুরে, ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর রাতের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে তেঁতুলিয়ায়, ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানীতে গতকাল বিকালে বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পর শীত শীত আমেজ অনুভূত হয়। অনেক স্থানে আকাশ ছিল হালকা মেঘময়। আগামী দুদিনে এ অবস্থার কোনো পরিবর্তন দেখছে না আবহাওয়া অফিস। তবে বর্ধিত পাঁচ দিনে হালকা পরিবর্তন হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, সাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। লঘুচাপটির বর্ধিতাংশটি বিস্তৃত রয়েছে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত। এ অবস্থায় আজ চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে।
এদিকে বিজ্ঞানীরা পূর্বাভাস দিচ্ছেন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এবছর প্রচণ্ড শীত হানা দিতে পারে। মালদ্বীপের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ফুলব্রাইট ইউএস স্কলার অধ্যাপক ড. রাশেদ চৌধুরী বলেন, লা নিনা ও দুর্বল পোলার ভরটেক্সের কারণে বাংলাদেশসহ এশীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে এবারের শীতকালে স্বল্প সময়ের জন্য হঠাত্ হঠাত্ মাত্রাতিরিক্ত ঠান্ডা অনুভূত হতে পারে। পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে প্রক্রিয়াটি যুক্ত। পোলার ভরটেক্স বাধাপ্রাপ্ত হলে অথবা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় চলতে না পারলে ইউরোপ ও এশিয়ার বেশির ভাগ অঞ্চলে ঠান্ডা বায়ু ছড়িয়ে পড়ে এবং চলতি বছর এ কারণে বাংলাদেশে শীতের কোনো কোনো সময় প্রচণ্ড ঠান্ডা পড়তে পারে। ঠিক এর বিপরীত কারণেই এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপে স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে বেশি গরম ছিল। পোলার ভরটেক্স হলো—পৃথিবীর উভয় মেরু অঞ্চলের বিশাল অঞ্চলের লঘুচাপ এবং ঠান্ডা বায়ুর এলাকা। এটা সব সময় মেরু অঞ্চলের কাছাকাছি অবস্থান করে এবং গ্রীষ্মে দুর্বল হয়ে যায় ও শীতে শক্তিশালী হয়। মেরু অঞ্চলের কাছের বায়ুমণ্ডলে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘুরে মেরু অঞ্চলের পরিবেশ ঠান্ডা রাখে। অনেকসময় উত্তর গোলার্ধের ভরটেক্সের সম্প্রসারণ ঘটে এবং জেট স্ট্রিমের (খুবই ঠান্ডা বায়ুপ্রবাহ) সঙ্গে ঠান্ডা বায়ু দক্ষিণ দিকে পাঠিয়ে থাকে।