সারাবিশ্বডটকম নিউজ ডেস্ক: মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) ভোর ৬টা ১০ মিনিটে রাজধানীর বঙ্গবাজারের টিনশেটের চারটি মার্কেটে আগুন লাগার পর এদিন মধ্যরাতেও বের হচ্ছিল কালো ধোঁয়া। পাশের এনেক্সকো টাওয়ারের চার ও পাঁচ তলা থেকে এই ধোঁয়া বের হচ্ছিলো। এসবের মধ্যেই চলছিলো ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম ও টাওয়ারের দোকান মালিক-কর্মচারীদের মালামাল সরানোর তৎপরতা।
চারপাশ মধ্যরাতেও লোকারণ্য। উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত থাকায় বঙ্গবাজার মার্কেটের সামনের সড়কটি বন্ধ রাখা হয়েছে।
সরেজমিনে মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বঙ্গবাজার মার্কেট এলাকায় হাজার-হাজার মানুষের ভিড় দেখা গেছে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেও সফল হননি। তাদের অনেকেই ব্যস্ত ছবি তোলায়।
এ ভিড়ের মধ্যেই মালামাল যতটা সম্ভব রক্ষা করার কাজে ব্যস্ত ছিলেন এনেক্সকো টাওয়ারের দোকানি ও কর্মচারীরা। ভবনের চার, পাঁচ, ছয় ও সাততলা থেকে মালামাল নিচে ছুড়ে মারছিলেন কর্মীরা।
এ সময় এক দোকান সহকারী বলেন, ‘টিনশেড মার্কেটে যখন আগুন লাগে, তখনই এনেক্সকো টাওয়ারের চার, পাঁচতলায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। অনেক দোকানে তালা ছিল, সেসবের দোকানদাররা দেরিতে আসায় দোকানের ভেতরে আগুন ছড়িয়েছে। কোথাও-কোথাও আগুন নিভলেও ধোঁয়া রয়ে গেছে।’
এনেক্সকো টাওয়ারের একটি দোকানের মালামাল স্থানান্তরের কাজ করছিলেন ভ্যান চালক শাহ আলম। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘এই টাওয়ারের মালামাল টানতেছি দুপুর থেকে। এখন এনেক্সকো টাওয়ারের পূর্ব দিকে ধোঁয়া বেরুইতেছে। যে কারণে সব দোকানিরাই মাল সরায়া নিতাছে।’
রাত পৌনে ১১টার দিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ধোঁয়া এখনও উঠতেছে। আমরা চেষ্টা করছি। অভিযান এখনও শেষ হয়নি।’
এনেক্সকো টাওয়ারের পশ্চিম-দক্ষিণ পাশে স্বেচ্ছাসেবকের কাজে ব্যস্ত ছিলেন সাম্যতা নামে একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ইসমাত রহমান সায়েম। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আজ রাতের মধ্যে উদ্ধার অভিযান শেষ হবে আশা করি। আমরা ‘সাম্যতা’ সংগঠনের অন্তত ২০ জন স্বেচ্ছাসেবী উদ্ধার কাজে যুক্ত হয়েছি। আমরা অন্তত এক হাজার মানুষকে ইফতার করিয়েছি।’
কথা বলতে-বলতেই উৎসুক মানুষের ভিড় কমাতে তিনি বাঁশি বাজিয়ে চলেছেন। হতাশ কণ্ঠে তার অনুযোগ, ‘উৎসুক মানুষের ভিড়ে উদ্ধার অভিযানে সমস্যা হয়। তবুও মানুষ আসে।’
মঙ্গলবার সকালে বঙ্গবাজার টিনশেড মার্কেটে আগুন লেগে সব ছাই হলেও এনেক্সকো টাওয়ারে অবশ্য সেই পরিস্থিতি হয়নি। তবে ধোঁয়া না কমায় ব্যবসায়ীরা নিজেদের দোকানের মালামাল সরিয়ে নিচ্ছিলেন অন্যত্র।
পিকআপ, ভ্যান, রিক্সা ও শ্রমিকদের মাধ্যমে মালামাল সরিয়ে নিতে দেখা গেছে অন্তত কয়েকশ ব্যক্তিকে। জেবি কালেকশনের এক কর্মচারি বলেন, ‘আগুনের ঘটনায় দোকানের প্রায় পুরোটাই ক্ষতি হয়েছে। এখন যেটুকু বেঁচে গেছে সেটা রক্ষার চেষ্টা করতেছে সবাই।’
সরিয়ে নেওয়া মালামাল কীভাবে বিক্রি করা হবে, এমন প্রশ্নে এই কর্মচারি বলেন, ‘দোকান খুললে বিক্রি শুরু হবে। এনেক্সকো টাওয়ার পুরোপুরি খুলতে দুয়েকদিন তো সময় লাগবে।’
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার সময় সরেজমিনে বঙ্গবাজার-ফুলবাড়িয়া এলাকায় ব্যাপক মানুষের ভিড় দেখা গেছে। আশেপাশে অন্তত তিন-চারটি রোড বন্ধ রয়েছে উদ্ধার তৎপরতার কারণে। আশপাশের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন।
জানতে চাইলে মঙ্গলবার রাত সাড়ে এগারোটার দিকে ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার আহসান হাবীব বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বঙ্গবাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও এখনো ডাম্পিং এর কাজ চলছে। এনেক্সকো ভবনে চারতলা এবং পাঁচতলায় ডাম্পিং চলছে। ডাম্পিংয়ের সময় অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় জিনিসপত্র সরালে সেখান থেকে ধোঁয়া নির্গত হয়। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর পরবর্তীতে আগুন লাগার কোনও ঘটনা ঘটেনি। এই রাতেও ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার অভিযানে পুলিশ সদস্যরা সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন।
বঙ্গবাজার দোকান মালিক সমিতির এক সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, দোকান পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বুধবার (৫ এপ্রিল) সকালে ব্যবসায়ীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাবর দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করবে। তারা ক্ষতিপূরণ চাইবে।
বঙ্গবাজার টিনশেড মার্কেটের একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘যারা মালিক ছিলেন তারা ক্ষতিপূরণ পাবেন। তবে যারা দোকানের ভাড়াটিয়া ছিলেন, তারা কীভাবে ক্ষতিপূরণ পাবে। সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।’