সারাবিশ্বডটকম রিপোর্ট: পশ্চিম আফ্রিকার দেশ ঘানাতে মারবার্গ ভাইরাসে আক্রান্ত দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে এবং ৯৮ জনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এই ঘটনায় একটি নতুন গণ সংক্রমণের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এখবর জানিয়েছে।
তীব্র সংক্রমণশীল এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হলে জ্বর, পেশিতে ব্যথা, ডায়রিয়া, বমি এবং কিছুক্ষেত্রে চরম রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়। অতীতে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে শত শত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, বিশেষ করে আফ্রিকায়।
মারবার্গ ভাইরাস কী?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-এর তথ্য অনুসারে, প্রাণঘাতী ইবোলা ভাইরাসের সমগোত্রীয় হলো মারবার্গ। ১৯৬৭ সালে জার্মানির মারবার্গ ও ফ্রাঙ্কফুর্ট এবং সার্বিয়ার বেলগ্রাদে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর ৩১ জন আক্রান্ত ও ৭ জনের মৃত্যুর পর প্রথম মারবার্গ ভাইরাস শনাক্ত হয়।
ভাইরাসটির উৎস শনাক্ত করা হয় উগান্ডা থেকে আমদানি করা সবুজ বানরে। কিন্তু এরপর থেকে ভাইরাসটির সঙ্গে অন্যান্য প্রাণীর যোগসূত্র পাওয়া গেছে। মানুষের মধ্যে এটি ছড়ায় প্রধানত বাদুড়ের বসবাস আছে এমন গুহা ও খনিতে দীর্ঘদিন অবস্থান করা ব্যক্তির মাধ্যমে।
ঘানায় ভাইরাসটির এটিই প্রথম সংক্রমণ। কিন্তু আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশে এর আগে প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে- ডিআর কঙ্গো, কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, উগান্ডা ও জিম্বাবুয়ে।
২০০৫ সালে অ্যাঙ্গোলাতে ছড়িয়ে পড়া সংক্রমণে ৩০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু গত ৪০ বছরে ইউরোপে মাত্র এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। উগান্ডার একটি গুহায় খনন কাজ শেষে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরা একজনেরও মৃত্যু হয়েছে।
মারবার্গে আক্রান্ত হলে যেসব উপসর্গ দেখা দেয়?
মারবার্গ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার শুরুর দিকে জ্বর, ভীষণ মাথাব্যথা ও পেশিতে ব্যথা দেখা দেয়। তিন দিন পর পাতলা পায়খানা, পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং বমি শুরু হয়।
ডব্লিউএইচও বলছে, এই পর্যায়ে রোগীদের চেহারাকে ‘ভূতের মতো’ বৈশিষ্ট্যের, চোখ ডেবে যাওয়া, অভিব্যক্তিহীন মুখ এবং চরম আলস্য হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। অনেক রোগীর শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে রক্তক্ষরণ হয়। প্রচুর রক্তক্ষরণ ও চোটের কারণে অসুস্থ হওয়ার ৮ থেকে ৯ দিনের মধ্যে রোগীর মৃত্যু হয়।
সংস্থাটির মতে, ভাইরাসে আক্রান্তের মধ্যে গড়ে অর্ধেকের মৃত্যু হয়। কিন্তু সবচেয়ে প্রাণঘাতী ধরনে ৮৮ শতাংশ পর্যন্ত মৃত্যু হয়।
কীভাবে ছড়ায় মারবার্গ ভাইরাস?
সাধারণত মিসরীয় এক প্রজাতির বাদুড় ভাইরাসটি বহন করে। আফ্রিকার সবুজ বানর ও শুকরও এটি বহন করতে পারে। মানুষের মধ্যে এটি ছড়ায় দৈহিক তরল এবং আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত স্পর্শের মাধ্যমে।
এমনকি সুস্থ হওয়ার পরও বেশ কয়েক মাস আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত বা বীর্য থেকে অনেকের মধ্যে ভাইরাসটি ছড়াতে পারে।
কীভাবে চিকিৎসা করা হয়?
ডব্লিউএইচও বলছে, এই ভাইরাসের নির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা বা টিকা নেই। কিন্তু বেশ কয়েকটি রক্ত পণ্য, ওষুধ এবং ইমিউন থেরাপির উদ্ভাবন হয়েছে। চিকিৎসকরা হাসপাতালে ভর্তি রোগীর উপসর্গ উপশম করতে পারেন প্রচুর তরল ও হারানো রক্ত প্রতিস্থাপন করে।
কীভাবে বিস্তার রোধ করা যায়?
সবার জন্য টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিতের পক্ষে প্রচারকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্যাভি’র মতে, আফ্রিকার মানুষের উচিত স্থানীয় বণ্যপ্রাণীর মাংস ভক্ষণ বন্ধ করা।
ডব্লিউএইচও বলছে, সংক্রমণ ছড়ানো এলাকায় শুকরের সংস্পর্শ এড়ানো উচিত মানুষের।
আক্রান্ত পুরুষদের উচিত সুস্থ হওয়ার এক বছর বা দুই বার পরীক্ষায় নেগেটিভ আসার আগ পর্যন্ত কনডম ব্যবহার করা।
মারবার্গ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির দাফন বা সৎকারে নিয়োজিত ব্যক্তিদের মৃতের দেহ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকা উচিত।