প্রবাসে বাংলাদেশিতে মুগ্ধ কাতার

ফাইল ছবি।

সারাবিশ্বডটকম আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আল সাদ ক্লাব কেবল কাতারেরই নয়, এশিয়ার অন্যতম সেরা ক্লাব। এই ক্লাবে বিশ্বসেরা ফুটবলারদের অনেকেই খেলেছেন। স্পেনের বিশ্বকাপজয়ী তারকা জাভি হার্নান্দেজ এখানে খেলেছেন। এই দলে কোচের দায়িত্বও পালন করেছেন জাভি। বর্তমানে আল সাদে খেলছেন সান্টি কাজোরলার মতো তারকা। কাজোরলা ২০১২ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত টানা ছয় বছর খেলেছেন আর্সেনালে। স্পেনের জার্সিতে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ৮১টি। এশিয়ার সেরা এই ক্লাবে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করছেন অন্তত ৩০ বাংলাদেশি। কেবল আল সাদ ক্লাবই নয়, কাতারের অন্যান্য ক্লাবেও কাজ করছেন বাংলাদেশিরা। ক্লাব কর্তারা বাংলাদেশের এসব কর্মীকে পেয়ে দারুণ আনন্দিত। তাদের কাজে-কর্মে, আচরণে মুগ্ধ। শুধু ক্লাবগুলোতেই নয়, কাতারের যে কোনো স্থানে গেলেই পাওয়া যায় বাংলাদেশের মানুষ। শপিং সেন্টারগুলোতে গিয়ে বাংলায় কথা বললেই ছুটে আসেন কেউ না কেউ। অনেকেই সফলতার সঙ্গে ব্যবসা করছেন। বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টের সংখ্যাও কম নয়। কেউ কেউ জড়িয়ে আছেন আবাসন ব্যবসায়। কাতারের বাংলাদেশ কমিউনিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ার হোসেন আকন বললেন, ‘কাতারে অনেকেই ৩০/৩৫ বছর ধরে আছে। কেউ কেউ আছেন আরও বেশি সময় ধরে। এই দেশে আমরা খুবই ভালো আছি। কাতারের সরকার, স্থানীয় লোকজন সবার কাছ থেকেই পেয়েছি ভালোবাসা।’ কাতারের মসজিদগুলোতে বাংলাদেশের ইমামের সংখ্যাও অনেক। বিখ্যাত মিডিয়া নেটওয়ার্ক আল জাজিরা কমপ্লেক্সে মসজিদের ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক। তিনি বললেন, ‘কাতারের মানুষের কাছ থেকে অভূতপূর্ব সম্মান পেয়েছি আমরা। এই দেশে সবাইকেই সমান চোখে দেখা হয়। মধ্যপ্রাচ্যের আর কোনো দেশে সম্ভবত এমনটা চোখে পড়বে না।’ এমনটাই বলেছেন, কাতারে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দক্ষতা বৃদ্ধি নিয়ে কাজ করা মানবিক ইউনিট সংগঠনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আহমদ। প্রত্যেকেই যার যার স্থান থেকে নিজেদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। বিনিময়ে মোটা অঙ্কের বেতনের পাশাপাশি পাচ্ছেন মর্যাদাও। আল সাদ ক্লাবের স্পোর্টিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ গোলাম বললেন, ‘আমরা বাংলাদেশের মানুষকে অনেক ভালোবাসি। কারণ, তারা নিজেদের কাজে দক্ষ। নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে। আচরণে বিনয়ী ও ভদ্র। আমাদের ক্লাবের কথা বলতে পারি, এখানে বাংলাদেশিরাই সবদিক থেকে সেরা। এরপর বলব মিসরীয়দের কথা।’ প্রবাসী বাংলাদেশিদের সম্পর্কে মুগ্ধতা জড়ানো কণ্ঠে এভাবেই বলছিলেন আল সাদ ক্লাবের স্পোর্টিং ডিরেক্টর। তিনি বলেন, বিশ্বকাপ ভেন্যু নির্মাণে অনেক বাংলাদেশি শ্রমিক আস্থার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবক কর্মীরাও থাকছেন। নতুনভাবে নির্মিত রেস্টুরেন্টগুলোয় বেশ কজন বাংলাদেশের অফিসারকে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যেসব দেশের শ্রমিকরা বিশ্বকাপের বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত ছিলেন, তাদের আচার-আচরণে মুগ্ধ আয়োজক কমিটি। এ কথা বলতে পারি, বিশ্বকাপে না গেলেও বাংলাদেশিদের সহযোগিতা ছিল নিঃসন্দেহে প্রশংসা করার মতো।

২০১৯ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী কাতারে বাংলাদেশি আছে ৪ লাখ। গত কয়েক বছরে এই সংখ্যা আরও কিছুটা বেড়েছে। বর্তমানে প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজারের কাছাকাছি বাংলাদেশি আছেন কাতারে। দেশটির মোট জনগোষ্ঠীর সাড়ে ১২ শতাংশই বাংলাদেশের মানুষ। এই দেশে ভারতীয় আর নেপালিদের সংখ্যাও কম নয়। কিন্তু আচার-আচরণে, কাজের দক্ষতায় সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে প্রবাসী বাংলাদেশিরা। ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি সৌদি আরবে। তবে কাতারও খুব একটা পিছিয়ে নেই। এই তালিকায় ছয় নম্বরে অবস্থান করছে দেশটি। এর কারণ, বাংলাদেশের মানুষকে বিশ্বস্ত হিসেবে জেনে আপন করে নিচ্ছে কাতারিরা।কেবল কাতারের মানুষই নয়, এই দেশে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত আছে প্রায় ৯০টি দেশের মানুষ। তারাও মুগ্ধ বাংলাদেশিদের কাজে-কর্মে। আল সাদ ক্লাবে প্রায় ৩০ জন বাংলাদেশি কাজ করছেন। তারা জাভি হার্নান্দেজের সময়ও ছিলেন। সেসময় বার্সেলোনার বর্তমান কোচকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন বাংলাদেশের ইমরান, জাফর, ওয়াহিদরা। আল সাদের টিম ম্যানেজমেন্টে কাজ করা ইমরান বলেন, ‘আমরা জাভি হার্নান্দেজের সঙ্গে কাজ করেছি। তিনি আমাদের খুবই ভালোবাসতেন। এখনো যোগাযোগ হয়। আমরা তার দাওয়াতে স্পেনেও গিয়েছিলাম।’ আল সাদ ক্লাবের মিডিয়া ম্যানেজার মিসরের সামির। তিনি ইমরানদের নিয়ে বলেন, ‘ওরা পরম নিষ্ঠার সঙ্গে এই ক্লাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।’ পৃথিবীর নানা দেশে ছড়িয়ে আছে বাংলাদেশের মানুষ। নিজেদের কর্মতৎপরতায় একের পর এক সিঁড়ি বেয়ে উঠে যাচ্ছে ওপরের দিকে। সেই সঙ্গে ওপরের দিকে উঠছে বাংলাদেশও। কাতারে প্রবাসী বাংলাদেশিরা লাল-সবুজের পতাকার গৌরব বাড়িয়েই চলেছেন।