প্রথমবারের মতো যাত্রী নিয়ে মতিঝিলের অফিসপাড়ায় মেট্রোরেল

ছবি: সংগৃহিত।

সারাবিশ্বডটকম নিউজ ডেস্ক: অবশেষে পূর্ণতা পেলো দেশের প্রথম মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-৬। শনিবার (৪ নভেম্বর) উদ্বোধন হওয়ার পর খুলে গেলো মেট্রোরেল আগারগাঁও-মতিঝিল অংশ। আর এর মধ্য দিয়ে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে তৈরি হলো এক নতুন গতির পথ। এখন ৩৮ মিনিটেই মেট্রোরেলে করে উত্তরা থেকে সরাসরি যাওয়া যাবে মতিঝিল। এতে সুবিধা পাবেন এই রুটে চলাচল করা যাত্রীরা। তাদের যাপিতজীবনে যুক্ত হবে অতিরিক্ত সময়। তাই উচ্ছ্বসিত মেট্রোরেলের আশপাশ এলাকার নানা পেশাজীবী ও সাধারণ বাসিন্দারা। তারা বলছেন, ‘দীর্ঘ সময় নাকাল হয়ে অফিস যাওয়ার কষ্ট থেকে অবশেষে মিলছে মুক্তি।’ 

রবিবার (৫ নভেম্বর) প্রথমবারের মতো যাত্রী নিয়ে মতিঝিল গেছে মেট্রোরেল। এদিন সকাল সাড়ে ৭টায় উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা মেট্রোরেলটি মতিঝিলে এসে পৌঁছায় ৮টা ১ মিনিটে। 

এদিন সকাল ৯টায় মেট্রোরেলের কয়েকটি স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, অফিসগামী যাত্রীদের পাশাপাশি অসংখ্য দর্শনার্থীর ভিড়। আবার বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধের কারণেও কেউ কেউ মেট্রোরেলে যাতায়াত করছেন।

মিরপুরের বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী মো. জাকির অফিস করতে নিয়মিত মতিঝিল যান। উচ্ছ্বসিত এই তরুণ বলেন, ‘এখন থেকে আর অফিসে যেতে দেরি হবে না। অফিসে কোনও এক্সকিউজও দিতে হবে না। সময় মতোই হাজির হতে পারবো।’

আরেক চাকরিজীবী আশিক বলেন, ‘আমার অফিসের গাড়ি আছে। কিন্তু অবরোধের কারণে গাড়ি আসেনি। অবরোধ থাকার পরও আমি নিশ্চিন্তে এবং সময়মতোই যেতে পারছি। আবার বাসের মতো আগুন দেওয়ারও চিন্তা নেই। এটা অবশ্যই অনেক বড় সুবিধা বলে আমি মনে করি।’ 

‘বাঁচবে কর্মঘণ্টা’

সাধারণ গণপরিবহনে উত্তরা থেকে মতিঝিল যেতে অফিস আওয়ারে প্রায় দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় ব্যয় হয়। তবে মেট্রোরেলে করে প্রায় ৩৮ মিনিটের মধ্যে নির্বিঘ্নে চলে যেতে পারছে ঢাকার এক প্রান্তর থেকে আরেক প্রান্ত। এতে সময় অপচয় রোধের পাশাপাশি পেশাগত ও ব্যক্তিজীবনে যুক্ত হচ্ছে অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা। যা জীবনকে আরও ‘প্রোডাক্টিভ’ করে তুলবে বলে মনে করেন যাত্রীরা।

নাজমুল হোসেন নামে মিরপুরের এক যাত্রী বলেন, ‘মেট্রোরেলের কারণে যে সময়টা সেভ হবে। তাতে আগে যদি আমি একটি কাজ করতে পারতাম এখন আমি দুটি কাজ করতে পারবো। আর সড়কে ভোগান্তির কারণে কাজের ক্ষেত্রে মেন্টালি অ্যাডজাস্ট করতে সমস্যা হতো, সেটা আর হবে না। এখন কাজেও মনযোগ বাড়বে।’

এখন অফিস শেষ করে পরিবারকে ‘কোয়ালিটি টাইম’ দেওয়াও সম্ভব হবে বলে মনে করেন উত্তরা আজিমপুর থেকে আসা আমিনুর ইসলাম। তিনি বলেন, ‘যানজটের কারণে রাস্তায় তিন-চার ঘণ্টা নষ্ট হয়। আর এমনিতে তো অফিস ৯ থেকে ১০ ঘণ্টা থাকতে হয়। দিনে অর্ধেকেরও বেশি সময় পরিবার থেকে দূরে থাকতে হয়। তাছাড়া আসা যাওয়া যে ভোগান্তি পরে বাসায় গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভালো সময় কাটানোর সুযোগ বা এনার্জি কোনটাই থাকে না। আগারগাঁও পর্যন্ত এর আগে যাতায়াত করেছি। আজ মেট্রোরেলে করে পল্টনে আমার অফিসে যাবো। এখন থেকে কোনও ভোগান্তি ছাড়াই যখন আসা-যাওয়া হবে। অনেক সময় সেভ হবে। ফলে ফ্যামিলির সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম কাটাতে পারবো।’

‘মিলবে মানসিক প্রশান্তি’

যেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে বাসে বসে থেকে অপেক্ষা করতে হতো, সেখানে মেট্রোরেলের নির্বিঘ্ন যাত্রায় মানসিক স্বস্তি নিয়ে এসেছে জনমনে। তারা বলেন, এসির বাতাস খেতে খেতে অল্প সময়ে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যাওয়া যাচ্ছে। কোনও যানজট নেই, ভাড়া নিয়ে তর্ক নেই, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ নেই। এসব কারণে মেট্রোরেলে চলাচলে মানসিকভাবেও বিষণ্ণতায় থাকতে হবে না।

নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে আগারগাঁও স্টেশনে থেকে ওঠা চাকরিজীবী কামরুন্নাহার রত্না বলেন, ‘প্রতিদিন ৩ ঘণ্টার জ্যাম ঠেলে মতিঝিল আমাকে অফিস যেতে হয়। বাসে ওঠার জন্যও যুদ্ধ করতে হয়। এতে দিনের কাজ শুরু আগেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে হতো। অফিসের কাজে মন দিতে সময় লাগে। সেই কাজ শেষ করতেও সময় লাগে অথবা কাজের চাপ মাথায় নিয়েই ঘুরতে হয়। এইভাবেই কাটছে দিন। এখন মেট্রোরেল চালু হয়েছে। আশা করছি সব ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবো।’

আরেক যাত্রী অ্যাডভোকেট সুমন আকন্দ বলেন, ‘আমি একটা কোম্পানির লিগ্যাল উইংয়ে আছি। আমাকে প্রতিদিন মতিঝিল যেতে হয়। এমনও দিন গেছে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা লেগে গেছে মতিঝিল যেতে। তাই মেট্রোরেল আমাদের কাছে স্বপ্নের মতো। স্বপ্ন এই কারণে বলছি, যেখানে যেতে আমাদের অন্তত ২ ঘণ্টা লাগতো, সেখানে হয়তো লাগবে ২৫ থেকে ৩০ মিনিট; এটাতো স্বপ্নই।

সূত্র: বাংলাট্রিবিউন