পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দিল্লি সফরে না যাওয়া কি ‘কূটনৈতিক অসুস্থতা’?

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন (ফাইল ছবি)

সারাবিশ্বডটকম রিপোর্ট: কূটনীতিতে ‘ডিপ্লোম্যাটিক ইলনেস’ বলে একটি শব্দ প্রচলিত আছে। এর অর্থ হচ্ছে যখন কোনও কূটনীতিক কারও সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন না, দেখা করা ঠিক হবে না, দেখা করার জন্য নিষেধ করাসহ যেকোনও কারণে দেখা করেন না বা কোথাও যান না, তখন অজুহাত হিসেবে ‘শারীরিক অসুস্থতার’ কথা বলা হয়। এই অজুহাতটি কূটনীতিতে বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন সময়ে ব্যবহার করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত যাত্রায় সফরসঙ্গী হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের নাম ছিল। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে রবিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি তার যাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। রবিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে জানা যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী যাচ্ছেন না এবং কারণ হিসেবে শারীরিক অসুস্থতার কথা জানানো হয়। এর আগে কখনোই কোনও পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হননি, এমন ঘটনা ঘটেনি।


সফরের তিন সপ্তাহ আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ‘আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে’ মন্তব্যে বিব্রত হয় সরকার। ওই সময়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতারা এর তীব্র সমালোচনা করেন। তখন থেকে একটি গুঞ্জন ছিল ভারত সফরে তিনি যাচ্ছেন কিনা এবং পরবর্তী সময়ে সেটি সত্যি পরিণত হয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর না যাওয়া ‘ডিপ্লোম্যাটিক ইলনেস’ কিনা জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘এটি আমি বলতে পারবো না। এক্ষেত্রে সরকারিভাবে বলা হয়েছে তিনি অসুস্থ এবং এটি আমরা মেনে নিই।’

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে কারা যাবেন এটি নির্ধারণের একমাত্র এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রীর। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরসঙ্গী না হওয়াটা একদম ব্যতিক্রমী।’

সফরে এর কোনও প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শীর্ষ পর্যায়ের সফরে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ার কোনও কারণ দেখছি না।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হতাশা

পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিল্লি সফরে যাচ্ছেন না সেটি মিডিয়াতে আসার আগ পর্যন্ত জানতেন না ওই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। মিডিয়াতে খবর দেখে বিভিন্ন জায়গায় তারা খবর সংগ্রহের চেষ্টা করেন কেন মন্ত্রী গেলেন না।

অনেক কর্মকর্তা হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, এটি এর আগে কখনোই হয়নি। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে মন্ত্রণালয়ের ওপর।

অনেকের মন্তব্য হচ্ছে, হি মেকস ডিপ্লোম্যাসি ডিফিকাল্ট ফর দি ডিপ্লোম্যাট (তিনি কূটনীতিকদের কূটনীতি করাকে কঠিন করে দিচ্ছেন)।

একজন কর্মকর্তা বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য বিদেশিরা সবসময় লক্ষ করে। কূটনীতিক বক্তব্যের কারণে তিনি সমালোচিত হলে আমাদের গুরুত্বের জায়গা কমে যায়।

সংবাদ সম্মেলন

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন সবসময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে পছন্দ করেন। ‘আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে’ মন্তব্যের পরে কিছু দিন সাংবাদিকদের পরিহার করে চলার পরে গত কয়েক দিন তিনি সাংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সাবধানে কথা বলা শুরু করেন।

রবিবার সংবাদ সম্মেলনে ভারত নিয়ে মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে হাস্যোজ্জ্বল পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেটির ব্যাখ্যা দেন। তার লিখিত বক্তব্যে সফরসঙ্গীদের তালিকায় নাম ছিল পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। কিন্তু ডিপ্লোম্যাটিক ইলনেস বা অন্য যেকোনও কারণেই হোক তিনি দিল্লি যাননি।