সারাবিশ্বডটকম নিউজ ডেস্ক: দেশের ৮০ ভাগ ব্যাংক ২০২২ সালে সাইবার হামলার শিকার হয়েছে। ফলে তথ্য চুরির পাশাপাশি ম্যালওয়্যারের শিকারও হয়েছে অনেক ব্যাংক। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটি বলেছে, এ ধরনের ঝুঁকি প্রতিরোধের সক্ষমতা নেই দেশের ৮০ ভাগের বেশি ব্যাংকের। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিআইবিএম। ব্যাংক খাতের সব ধরনের লেনদেন থেকে শুরু করে হিসাবনিকাশ সবকিছুই এখন প্রযুক্তিনির্ভর। কিন্তু সেই প্রযুক্তি ব্যবস্থা কতটা সুরক্ষিত তা জানার উদ্যোগ নিয়েছিল বিআইবিএম। এ জন্য সংস্থাটি দেশের ৩২টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ওপর জরিপ চালিয়েছে। জরিপে উঠে এসেছে দেশের ৮১ শতাংশ ব্যাংকের সিস্টেম কোনো না কোনো সময় বন্ধ হয়েছে দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে। তথ্য চুরি হয়েছে ১১ শতাংশ ব্যাংকের। ম্যালওয়্যার (ভাইরাস) হামলার শিকার হয়েছে ৬১ শতাংশ ব্যাংক। সার্ভারে অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে ১৫ শতাংশ ব্যাংকের। আর প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে ২০ শতাংশ ব্যাংকে। তথ্য হারানো গেছে ৮১ শতাংশ ব্যাংকের।
গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সহযোগী অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান আলম বলেন, ১১ শতাংশ ব্যাংকের তথ্য চুরি হয়েছে এবং ১৫ শতাংশ ব্যাংকের সার্ভারে অনুপ্রবেশের ঘটনা সংখ্যার দিক থেকে কম হলেও অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং গ্রহণযোগ্য নয়। গবেষণা বলছে, এসব দুর্ঘটনার ২৩ শতাংশই ছিল উচ্চমাত্রার ঝুঁকিপূর্ণ। ১৩ শতাংশ অতি উচ্চমাত্রার ঝুঁকিপূর্ণ। মাঝারি আকারের ঝুঁকি ছিল প্রায় ৪০ শতাংশ আক্রমণের। কম মাত্রার ঝুঁকি ছিল ২১ শতাংশের মতো। এসব দুর্ঘটনার কারণে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে ৪৭ শতাংশ ব্যাংককে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসব দুর্ঘটনার বড় কারণ প্রযুক্তি জ্ঞানের অভাব। সাইবার হামলা মোকাবিলায় দক্ষ জনবল নেই ৮৯ শতাংশ ব্যাংকের। তাই ৮০ শতাংশ ব্যাংক বাইরের জনবল বা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সাইবার হামলা মোকাবিলার চেষ্টা করে।প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক দেব দুলাল রায় বলেন, বেকায়দায় পড়ার পর সবাইকে বললাম দুই দিনের প্রশিক্ষণ নিতে। প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর শেষ। তারপর আবার ১০ বছর আমি ঘুমাতে (হাইবার নেশন) চলে গেলাম। তাহলে কিন্তু সিকিউরিটি ব্যবস্থার কোনো কিছুই ঠিক হবে না। এ বিষয়ে বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক কানিজ রাব্বী বলেন, যেখানে প্রতি মুহূর্তে তথ্যপ্রযুক্তির আপডেট হচ্ছে, সেখানে যদি আমরা দুই বছর পরপর আপডেট করি, তাহলে বুঝতেই পারছেন আমরা আসলে অনেক পিছিয়ে আছি এ বিষয়ে। আমার মনে হয়, ব্যাংকগুলোর এ বিষয়ে একটু মনোযোগ দেওয়া উচিত। অনুষ্ঠানে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের প্রধান তথ্য ও প্রযুক্তি কর্মকর্তা মুশফিকুর রহমান বলেন, টেকনোলজি ব্যবস্থাপনার জন্য যে পরিমাণ অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে তার ২০ থেকে ৩০ শতাংশ যদি গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করা হয়, তাহলে আমরা সাইবার হামলার ঝুঁকি থেকে ভবিষ্যতে মুক্ত থাকতে পারব। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ব্যাংকগুলোর সাইবার সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্রতি বছর ব্যয় করা হচ্ছে ২ হাজার কোটি টাকা। সে হিসেবে এখন পর্যন্ত এ খাতের প্রযুক্তি উন্নয়নে বিনিয়োগ করা হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকা।