সারাবিশ্বডটকম নিউজ ডেস্ক: পটুয়াখালী-বরিশাল মহাসড়কের পায়রা নদীর ওপর সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। রবিবার (২৪ অক্টোবর) সকাল ১০টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন স্বপ্নের পায়রা সেতু। উদ্বোধনের পরই যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফোর লেনের এই সেতুটি। পায়রা সেতুর প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশালী আবদুল হালিম সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহৃত সেতুটি দক্ষিণাঞ্চলবাসীর জন্য আশীর্বাদ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু হলে শরীয়তপুরের কাঁঠালবাড়ি থেকে সরাসরি কুয়াকাটার সঙ্গে প্রায় ২১৩ কিলোমিটার সড়কের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপন হবে। এর মাধ্যমে স্থানীয়দের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, পর্যটন শিল্পের বিকাশ এবং পায়রা সমুদ্র বন্দরের ব্যবহার বাড়বে, সর্বোপরি আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে। বরিশাল বিভাগে এ সর্ববৃহৎ এ সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু হলে পটুয়াখালী-বরগুনা জেলাসহ উপকূলীয় ১০ উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন দেখা যাবে।
বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার শেষ ও পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার লেবুখালী ইউনিয়নের শুরুর অংশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত পায়রা নদীর ওপর সেতুটির অবস্থান। বরিশালের প্রান্তে সেতুটির পশ্চিম দিকে শেখ হাসিনা সেনানিবাসের অবস্থান। পদ্মাসেতুর টোল প্লাজা থেকে এ সেতুটি ১৩৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বরিশাল নগরের রুপাতলী থেকে ২৯ কিলোমিটার, পটুয়াখালী শহর থেকে ১১ কিলোমিটার এবং সাগরকন্যা কুয়াকাটার বাস টার্মিনাল থেকে ৭৯ কিলোমিটার দূরে এ সেতুর অবস্থান। সেতুর উত্তর দিকে ওজন স্কেল এবং দক্ষিণ দিকে ইলেকট্রনিক টোল প্লাজা নির্মাণ করা হয়েছে।
পায়রা সেতু প্রকল্প পরিচালক আব্দুল হালিম জানান, সেতুটি উদ্বোধনের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। সাজ সাজ রব বিরাজ করছে সেতুর উভয়পাড়ে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। সেজন্য সেতুর দক্ষিণ প্রান্তে বিশাল প্যান্ডেল প্রস্তুত করা হয়েছে। যেখানে পটুয়াখালীর পাঁচ সংসদ সদস্য ছাড়া বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
পায়রা সেতু প্রকল্প অফিস জানায়, পায়রা সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। যার ৮২ ভাগ অর্থ বহন করছে কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট এবং এপেক ফান্ড। ২০১৬ সালের ২৪ জুলাই শুরু হওয়া এ সেতুর ইতোমধ্যে শতভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এক হাজার ৪৭০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার প্রস্থের সেতুর উভয়পাড়ে প্রায় সাত কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক রয়েছে। নদী শাসনের কাজও প্রায় সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি আরও বেলেন, এ সেতুতে হেলথ মনিটরিং সিস্টেম ব্যবহারের ফলে ভূমিকম্প, বজ্রপাতসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা ওভারলোডেড গাড়ির কারণে ক্ষতি এড়াতে পূর্বাভাস মিলবে। নদীর মধ্যে এবং পাশে থাকা পিয়ারে যাতে কোনও নৌযান ধাক্কা দিতে না পারে সে জন্য পিয়ারের পাশে নিরাপত্তা পিলার স্থাপন করা হচ্ছে। এছাড়া এটি দেশের দ্বিতীয় ব্রিজ, যা এক্সট্রা ডোজ ক্যাবল সিস্টেমে তৈরি করা হয়েছে। পায়রা সেতু নির্মাণে নদীর তলদেশে বসানো হয়েছে ১৩০ মিটার দীর্ঘ পাইল, যা দেশে সর্ববৃহৎ। ৩২টি স্প্যানের মূল সেতুটি বিভিন্ন মাপের ৫৫টি টেস্ট পাইলসহ ১০ টি পিয়ার, পাইল ও পিয়ার ক্যাপের ওপর নির্মিত। এছাড়া সেতুতে রয়েছে ১৬৭টি বক্স গার্ডার সেগমেন্ট। এতে করে দূর থেকে সেতুটিকে ঝুলন্ত মনে হবে। জোয়ারের সময় নদী থেকে সেতুটি ১৮ দশমিক ৩০ মিটার উঁচুতে থাকবে। চার লেনের সেতুটির উভয়পাশে মোট এক হাজার ২৬৮ মিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল ইসলাম জানান, নান্দনিক সৌন্দর্যে ভরপুর সেতুটি সড়ক যোগাযোগে এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। এরফলে বরিশাল থেকে কুয়াকাটা যেতে আর কোনও ফেরি থাকছে না। স্বল্প সময়ে বরিশাল-কুয়াকাটা হবে।
তিনি আরও জানান, বরিশাল বিভাগের মধ্যে এত বড় সৌন্দর্যমন্ডিত সেতু দ্বিতীয়টি নেই। ইতোমধ্যে অনেক ভ্রমণপিপাসু মানুষ সেতুটি দেখতে এখানে জড়ো হচ্ছে প্রতিদিন তিনি বলেন, সেতুটি চালু হলে বরিশাল থেকে পটুয়াখালী আসতে সর্বোচ্চ সময় লাগবে মাত্র এক ঘণ্টা। আর মাত্র দুই থেকে আড়াই ঘণ্টায় বরিশাল থেকে কুয়াকাটায় যাওয়া যাবে।
পটুয়াখালী পৌরশহরের বাসিন্দা ঠিকাদার মো. হাফিজুর রহমান বলেন, পায়রা সেতু চালু হলে আমরা অল্প সময়ে বরিশাল যেতে পারবো। বরিশাল কিংবা ঢাকা যাওয়া-আসার সময় লেবুখালী ঘাটে ফেরির অপেক্ষায় অনেক সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। এখন তা হবে না।
পটুয়াখালী প্রেসক্লাবের সভাপতি স্বপন ব্যানার্জি বলেন, স্বপ্নের পায়রা সেতুর কারণে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা একধাপ এগিয়ে যাবে। এর প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, পর্যটন শিল্পের বিকাশ, মৎস্য বন্দর এবং পায়রা সমুদ্র বন্দরসহ সর্বোপরি আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে।
নারী এমপি কাজী কানিজ সুলতানা হেলেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। অল্প দিনের মধ্যেই পদ্মা সেতু চালু হবে। এরপর ঢাকা থেকে কুয়াকাটা ফেরিবিহীন সড়ক যোগাযোগে নবদিগন্ত সূচনা হবে। পায়রা সেতু চালু হলে পটুয়াখালীর পায়রা সমুদ্রবন্দর, পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, ইপিজেড ও কৃষিতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে। এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ দেশের অর্থনীতিতে সেতুটি ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। পর্যটন খাতেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে মনে করেন তিনি।