দূতাবাসে পদায়ন চাইবে পুলিশ

ফাইল ছবি।

সারাবিশ্বডটকম নিউজ ডেস্ক: চার বছর আগে পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতে পুলিশ কর্মকর্তাদের পদায়নের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু গত চার বছরে তা বাস্তবায়ন হয়নি। করোনার দুই বছর বাদে আবারও অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পুলিশ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একই দাবি জানাবে পুলিশ। এ ছাড়া পুলিশের গ্রেড-১ পদ নিয়ে জটিলতা নিরসনসহ আরও ১৮টি অতিরিক্ত আইজিপি পদসহ একগুচ্ছ দাবি উত্থাপন করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

‘বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে, পুলিশ আছে জনতার পাশে’ স্লোগানকে সামনে রেখে আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে পুলিশ সপ্তাহ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে উপস্থিত থেকে পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের পুলিশ সপ্তাহে দূতাবাসগুলোতে পুলিশ কর্মকর্তা পদায়নের দাবির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশ কর্মকর্তাদের আশ্বস্ত করেন। এরই ধারাবাহিকতায় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ -সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। বিষয়টি বাস্তবায়ন না হওয়ায় ২০১৯ সালের পুলিশ সপ্তাহেও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মতবিনিময় সভায় বিষয়টি উত্থাপন করেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সে সময় প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্র সচিবকে ওই নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণ খতিয়ে দেখতে বললেও বিষয়টি বাস্তবায়ন হয়নি।

বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের ৬০টির বেশি দূতাবাস ও মিশনে মিশনপ্রধানের অধীনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়রে কর্মকর্তাদের পাশাপাশি প্রশাসন ও অর্থনৈতিক ক্যাডারসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের প্রেষণে নিয়োগ দেয়া হয়।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিভিন্ন সময় নানা ধরনের আইনগত সমস্যায় পড়েন। এ ছাড়া বিদেশে বসে কিছু বাংলাদেশি দেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্রও করছে। অপরাধের বহুমাত্রিকতার কারণে বিদেশে বসে সাইবার অপরাধও করছেন অনেকে। এ ছাড়া মানি লন্ডারিং অনুসন্ধান, প্রবাসীদের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এবং পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের জন্যও ভোগান্তির শিকার হতে হয়। এ ক্ষেত্রে মিশনগুলোতে পুলিশ সদস্যদের প্রেষণে নিয়োগ দেয়া হলে প্রবাসীরা উপকৃত হবেন। এ ছাড়া বিদেশে পলাতক সন্ত্রাসীদের শনাক্ত করতেও পুলিশ কর্মকর্তারা বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারেন। এজন্যই দূতাবাসগুলোতে একজন করে পুলিশ কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়ার প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছিল।

পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং পেশাদারি প্রতিহিংসার কারণেই দূতাবাসে পুলিশ কর্মকর্তা পদায়ন হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী বলে দেয়ার পরও এর বাস্তবায়ন না হওয়াটা খুবই দুঃখজনক।’

সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে পুলিশ কর্মকর্তা নিযুক্ত রয়েছেন। তারা তাদের নাগরিকদের সুরক্ষা এবং আইনি সহায়তা দেয়ার জন্য আমাদের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কারণ একজন পুলিশ অন্য পুলিশের ভাষাটা খুব সহজেই বুঝতে পারেন।’

পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এবারের পুলিশ সপ্তাহে অন্যান্য বাহিনী এবং সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে অন্তত ১০টি গ্রেড-১ পদ দেয়ার দাবি জানানো হবে। এ ছাড়া বর্তমানে ১৮টি অতিরিক্ত আইজিপির পদ রয়েছে। এবার আরও ১৮টি অতিরিক্ত আইজিপির পদ সৃষ্টির দাবি জানানো হবে। একই সঙ্গে পুলিশের পদোন্নতি জটিলতা সহজ করার দাবিও জানানো হবে।

সূত্র জানায়, ৭ বছর ধরে ‘স্বতন্ত্র পুলিশ বিভাগ’ করার দাবি করা হচ্ছে। সেই দাবির পাশাপাশি নারী পুলিশের জন্য পৃথক ট্রেনিং সেন্টার, স্পোর্টস ট্রেনিং কমপ্লেক্স নির্মাণ, গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে ঋণ সুবিধা, পৃথক মেডিকেল কোর গঠনসহ জাতিসংঘের মানদণ্ড অনুযায়ী জনসংখ্যার অনুপাতে পুলিশ সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি, আধুনিক যানবাহন প্রাধিকার প্রদানসহ অন্যান্য দাবিও জানানো হবে।

পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সবসময়ই পুলিশের বিষয়ে আন্তরিক। তার দেয়া আশ্বাসগুলো পুলিশ সদর দপ্তর এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সমন্বয় করছে। আমাদের প্রত্যাশা, অর্থনৈতিক মন্দা কাটলে এসব সমস্যা দ্রুত সমাধান হবে।’

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী

পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত।’ পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান ও সাবেক সব সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিধান এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পুলিশ।’

পৃথক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি আশা করি, বাংলাদেশ পুলিশের প্রত্যেক সদস্য মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে দায়িত্ব পালন করবেন। আমি বিশ্বাস করি, আপনারা সততা, নিষ্ঠা ও মানবিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের প্রত্যাশিত ‘জনগণের পুলিশ’ হিসেবে গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করবেন।”

১১৫ জন পাবেন বিপিএম-পিপিএম পদক

এবারের বার্ষিক পুলিশ প্যারেডে অধিনায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দেবেন খুলনা রেঞ্জের পুলিশ সুপার কাজী মইন উদ্দিন। তার নেতৃত্বে বিভিন্ন কন্টিনজেন্টের পুলিশ সদস্যরা প্যারেডে অংশ নেবেন। প্যারেড শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১১৫ জন পুলিশ সদস্যকে নিজের হাতে পদক পরিয়ে দেবেন। ২০২২ সালে অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৫ জন পুলিশ সদস্যকে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)’, ২৫ জনকে ‘রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)’ এবং গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য ২৫ জন পুলিশ সদস্যকে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)-সেবা’ এবং ৫০ জনকে ‘রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)-সেবা’ প্রদান করা হবে।