দায়িত্বশীল আচরণ না করে বিএনপি নেতারা উসকানি দিচ্ছেন: কাদের

আগামীর সংকট মোকাবিলায় সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার না করে বিএনপিকে দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। 

তিনি বলেন, করোনা মহামারির অভিঘাতের মধ্যেই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ সারা বিশ্বকে এক সংকটের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সব রাজনৈতিক দল দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে বিএনপির কাছ থেকে জাতি কখনো দায়িত্বশীল কোনো আচরণ পায়নি। বরং তারা সব সময়ই সংকটময় মুহূর্তে জাতির ঐক্যের দুর্গে হানা দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের পাঁয়তারা করে। 

ওবায়দুল কাদের বলেন, বৈশ্বিক এই সংকটের মধ্যেও বাংলাদেশের অবস্থান তুলনামূলকভাবে ভালো রয়েছে। ঠিক যেমনটি করোনাকালেও ছিল। 

শুক্রবার এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন তিনি।

বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপি নেতাদের বক্তব্যকে নির্লজ্জ মিথ্যাচার, উসকানিমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান ওবায়দুল কাদের।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণায় যেসব রিপোর্ট উঠে এসেছে সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান যথেষ্ট ভালো। শেখ হাসিনার সুদক্ষ ব্যবস্থাপনা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সরকার সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০০৮ সালে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হয় তখনো সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা চলছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার সফল রাষ্ট্রনায়কোচিত ভূমিকার কারণে বাংলাদেশে সেই মন্দার প্রভাব পড়েনি। শেখ হাসিনা মানেই সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দানের নেতৃত্ব। শেখ হাসিনা মানেই দুর্যোগে সুযোগ সৃষ্টির কারিগর। 

তিনি বলেন, গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ধারাবাহিকভাবে দেশের জনগণ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সব সংকট সফলভাবে মোকাবিলা করেছে। অথচ সংকট মোকাবিলায় জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসকে নস্যাৎ করতে বিএনপি নেতারা প্রতিনিয়ত নির্লজ্জ মিথ্যাচার, উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। জনগণকে আস্থায় রাখতে না পেরে বিএনপি একটি হতাশাবাদী রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। তাই বিএনপি নেতারা প্রতিনিয়ত নিরাশার গল্প শুনিয়ে জাতির সঙ্গে তামাশা করছেন। 

‘তারা খুব সচেতনভাবেই এটি করছেন, যাতে মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে; সামাজিক শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়। একইসঙ্গে তারা জনগণকে বিভ্রান্ত করে সরকারবিরোধী মনোভাব তৈরির পাঁয়তারা করছেন। প্রকৃতপক্ষে হীন-রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারের অপচেষ্টায় শান্তিপ্রিয় মানুষকে আত্মঘাতী করে তোলার মতো দূরভিসন্ধি বিএনপির অর্বাচীন রাজনীতির পরিচায়ক।’

বিবৃতিতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি নেতারা কথায় কথায় বাংলাদেশকে শ্রীলংকার সঙ্গে তুলনা করে দেশের জনগণের আত্মবিশ্বাস ক্ষুন্ন করতে চায়। তারা দেশের স্বপ্নবান জনগোষ্ঠীর সামনে বিভ্রান্তির ধোঁয়া ছড়িয়ে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে চায়। অথচ সচেতন ব্যক্তি মাত্রই জানেন, দুই দেশের অর্থনীতির মৌলিক ভিত্তিই ভিন্ন। বাংলাদেশ ও শ্রীলংকাকে সমান্তরালে রেখে তুলনা করার কোনো সুযোগ নেই। তারা মূল্যস্ফীতি নিয়ে কথা বলছে। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেলে জনগণের ওপর চাপ বাড়ে একথা সত্য। সেদিক বিবেচনায় রেখে সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। তবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতা গ্রহণ করে তখন মূল্যস্ফীতি ছিল ১২.৩ শতাংশ। গত এক যুগের বেশি সময় ধরে শেখ হাসিনা সরকার সেই মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণ করে ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে রাখে।

বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের সময় আসলেই বিএনপি যে কোনো উপায়ে ক্ষমতা দখলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। তাদের বোঝা উচিত জনগণের জন্য কিছু না করে শুধু বাগাড়ম্বর বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ক্ষমতায় আসীন হওয়া যায় না।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নেতারা জাতির সামনে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য ও বিবৃতি দিয়েই চলছে। বাঙালি জাতি সর্বদা আত্মবিশ্বাসী জাতি। জনগণের আত্মবিশ্বাস ধ্বংস করা কোনো রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্য হতে পারে না। আমি বিএনপি নেতাদের প্রতি আহ্বান জানাব, সামনের সংকট মোকাবিলার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার না করে দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করুন। তাতে দেশের মানুষ উপকৃত হবে এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতি সমৃদ্ধ হবে।