অনলাইন ডেস্ক : ঢাকার চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। বলেছেন, ‘চকবাজারে আগুনের সঙ্গে গণতন্ত্রের কী সম্পর্ক আমি জানি না। তবে পেট্রোলবোমার মতো চকবাজারে আগুনের সঙ্গে বিএনপির কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কি না সেটি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।’
শনিবার কবি আবদুর রউফ ও মনজিল মুরাদ লাভলুর দুটি কাব্যগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
সাংবাদিক আজাদ তালুকদারের সভাপতিত্বে সকাল ১১টায় তথ্যমন্ত্রীর নগরের বাসভবনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
গত বুধবার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় গাড়ির সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর আশেপাশের কয়েকটি গাড়ি এবং খাবার হোটেলে গ্যাস সিলিন্ডারেরও বিস্ফোরণ ঘটে। পরে আগুন ছড়ায় ওয়াহেদ ম্যানসনে। আর সেখানে বিপুল দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খেতে হয় দমকল বাহিনীকে।
সরকারি হিসেবে ৬৭ জনের প্রাণহানির একটি বড় অংশই রাস্তা এবং খাবার হোটেলে হয়েছে। বাকিটা হয়েছে ওয়াহেদ ম্যানসনে। সেখানকার তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় আবাসিক ব্যবস্থা ছিল। আর নিচতলা ও দোতলায় বিভিন্ন পণ্য মজুদ ছিল।
দেশে গণতন্ত্র নাই বলে অভিযোগ করে চকবাজারের ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সরকারকে দায়ী করেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপি মহাসচিবের এমন মন্তব্যের সমালোচনা করে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তিনি (মির্জা ফখরুল) বলছেন গণতন্ত্র নাই বিধায় চকবাজারে আগুন লেগেছে। চকবাজারে আগুনের সঙ্গে গণতন্ত্রের কী সম্পর্ক আমি জানি না। তবে এ কথার মাধ্যমে এটি ব্যাখ্যা দেয়া যায় যে, পেট্রোলবোমার মতো এটার সঙ্গে (চকবাজারে আগুন) তাদের (বিএনপির) কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এই বক্তব্যের মাধ্যম ফখরুল সাহেব তাহলে প্রকারান্তরে এটিই বলেছেন যে এই অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা আছে। কারণ গণতন্ত্র নাই বিধায় তারা মানুষের ওপর পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করেছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলে ৫শ’র বেশি মানুষকে তারা পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে হত্যা করেছে। সাড়ে তিন হাজার মানুষকে আগুনে ঝলসে দিয়েছে।’
মির্জা ফখরুল সম্পর্কে নিজের উচ্চ ধারণা ছিল উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ফখরুল সাহেব সম্পর্কে আমার ধারণাটা অনেক উচ্চ ছিল। কিন্তু ইদানিং দেখা যাচ্ছে তিনি প্রচণ্ড অবান্তর কথা বলছেন। গণতন্ত্র নাই বলে চকবাজারে আগুন লেগেছে এটি কী রকম দায়িত্বহীন কথা এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
বিএনপি মহাসচিবকে অবান্তর কথা না বলার আহ্বান জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমি ফখরুল সাহেবকে বলবো যে, এধরণের অবান্তর কথা না বলে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে শিক্ষা নিন।
ভারতে জঙ্গি হামলায় ৫২ নিরাপত্তা কর্মী নিহত হবার ঘটনায় সকল বিরোধীদল যেভাবে সরকারকে সহযোগিতা করছে তা থেকে শিক্ষা নেয়ার পরামর্শ দেন হাসান মাহমুদ।
চকবাজার অগ্নিকাণ্ডের পর বিএনপির জাতীয় ঐক্য প্রদর্শন করা উচিত ছিল মন্তব্য করে হাছান মাহমুদ বলেন, এই সময়ে তাদের (বিএনপির) উচিত ছিল জাতীয় ঐক্য প্রদর্শন করা। একটি দায়িত্বশীল বিরোধী দল হিসেবে তাদের সেটিই করা উচিত ছিল। সেটি না করে যেকোনো ঘটনার মধ্যে রাজনীতি নিয়ে আসা সমীচীন নয়। সেটা না করে তিনি (মির্জা ফখরুল) বরং তাদের সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত দিচ্ছেন।
মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে শৈশবের স্মৃতিচারণ করে হাছান মাহমুদ বলেন, আমিও ছোটবেলায় কবিতা লিখতাম। আমার অনেক কবিতা চট্টগ্রামের বিভিন্ন কাগজে ছাপা হয়েছে। আমাদের স্কুলের বার্ষিকী সংখ্যায়ও আমার কবিতা ছাপা হয়েছে। স্কুলে যখন কোনও প্রতিযোগিতা হতো, তার পুরস্কার দেয়া হতো বই। সে বই এনে বাবাকে দেখাতাম, বাবা খুশি হতেন। আমার স্কুলের শিক্ষার কারণেই আজ এ জায়গায় আসতে পেরেছি।
হাছান মাহমুদ আক্ষেপ করে বলেন, রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার পর এখন আর কবিতা লেখা হয়ে ওঠে না। তবে অভিভাবকদের প্রতি আবেদন থাকবে, আপনারা সন্তানদের কবিতা পড়তে, সাহিত্য পাঠে উদ্বুদ্ধ করুন। স্মার্টফোন দেয়ার পরিবর্তে বই তুলে দিন। তাহলে আমাদের সন্তানদের মেধার যথাযথ মানসিক বিকাশ ঘটবে। এই চর্চা তাদের সাহিত্যপ্রেমী, সংস্কৃতিপ্রেমী হিসেবে গড়ে তুলবে। প্রকৃত বাঙালি হওয়ার জন্যে, বাঙালিত্ব বজায় রাখার জন্যে পাঠাভ্যাসের বিকল্প নেই।
অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সেকান্দর চৌধুরী, আগ্রাবাদ মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ড. আনোয়ারা আলম প্রমুখ।