ঢামেকে ১০ ঘণ্টার অপারেশনে আলাদা হয় জোড়া দুই শিশু, অংশ নেন ৮২ চিকিৎসক

সফলভাবে আলাদা করা হয়েছে শিফা ও রিফাকে।

সারাবিশ্বডটকম নিউজ ডেস্ক: বুকে-পেটে জোড়া লাগানো দুই শিশুকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে অস্ত্রপচারের মাধ্যমে পৃথক করা হয়েছে। শিশু দুটির নাম শিফা ও রিফা। ঢামেক হাসপাতালে বিভিন্ন বিভাগের ৮২ জন চিকিৎসক এ অস্ত্রপাচারে অংশ নেন।

সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালে কনফারেন্স রুমে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাহানুর ইসলাম।

বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার বাদশা মিয়া-মাহমুদা বেগম দম্পতির সন্তান শিফা ও রিফা। গত বছরের ৭ জুন তাদের জন্ম। বুকে ও পেটে জোড়া অবস্থায় জন্মায় তারা। ওই বছরের ২১ জুন  ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাদের।

ডাক্তার সাহানুর ইসলাম বলেন, এই শিশুদের জন্মগত ত্রুটি ছিল। এসব রোগীর ক্ষেত্রে কখনও কখনও এমন অবস্থায় পড়তে হয় যে দুজনের কাউকে রক্ষা করা যায় না। কখনও একজনকে সম্ভব হয়, অন্যজনকে হয় না। শিশু দুটির পরীক্ষা-নিরীক্ষার করে দেখা যায়, তাদের হৃদপিণ্ডের পর্দা, সাধারণ যকৃত নালী, পোর্টাল শিরা, ক্ষুদ্রান্ত্রের কিছু অংশ জোড়া লাগানো। দুই জনে মাঝে একজন অপেক্ষাকৃত কম খাওয়া সত্ত্বেও তার ওজন বাড়ত।

তিনি বলেন, এরপরও অপারেশন পরবর্তী ফলাফল ভালো ছিল। এত সব সমস্যার মধ্যেও আমরা সফলভাবে পৃথক করতে পেরেছি শিশুদুটিকে। সবার সমন্বয়ে এবং একটি টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে এটি সম্ভব হয়েছে।  

গত ৭ সেপ্টেম্বর প্রায় ১০ ঘণ্টার অপারেশনে শিশু দুটিকে আলাদা করা হয়। অপারেশন শেষে তাদের আইসিইউতে (ভেন্টিলেটরে) রাখা হয়। ৮ সেপ্টেম্বর রিফাকে ভেন্টিলেটর থেকে মুক্ত করা হয়। ৯ সেপ্টেম্বর শিফাকে ভেন্টিলেটর মুক্ত করা হয়। ১১ সেপ্টেম্বর শিফা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। পরে তাকে ন্যাশনাল হার্ড ফাউন্ডেশনের প্রধান শিশু কার্ডিয়াক সার্জন অধ্যাপক আরিফুজ্জামানের অধীনে রাখা হয়। সেখাকার সম্পূর্ণ খরচ হার্ড ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ বহন করে। সেখান থেকে শিফা ফেরত আসে ১৮ সেপ্টেম্বর। সেই থেকে শিশুটি ঢামেকের আইসিইতে রয়েছে। রিফা পুরোপুরি সুস্থ আছে।  চিকিৎসকরা জানিয়েছেন রিফার রক্তে সংক্রমণ হয়েছে। পুরোপুরি সেরে উঠতে কিছু সময় লাগবে। তবে আইসিইউতে থেকে আজকালের মধ্যে তাকেও কেবিনে দিয়ে দেওয়া হবে।

ঢামেকের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. কামরুল আলম শিফা-রিফা সম্পর্কে বলেন, এটা একটি ইন্টারেস্টিং ঘটনা। রিফা খায়, কিন্তু শিফার ওজন বাড়ে। এটা শুধু ঢাকা মেডিক্যালের সফলতা না, যদি আরেকটু বড় করে দেখি এটা বাংলাদেশের সফলতা। আমরা আশা করি, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের নেতৃত্বে আরও কঠিন কাজ করা সম্ভব।

হাসপাতাল পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আপনারা জানেন জুলাই থেকে আমরা একটি যুদ্ধের মধ্যে ছিলাম। এর মধ্যেও এতো বড় একটি সফলতা অর্জন করেছেন চিকিৎসকরা।

শিফা-রিফার বাবা গার্মেন্টসকর্মী বাদশা মিয়া বলেন, আমি নিতান্ত গরিব মানুষ। আমার পক্ষে এ চিকিৎসা করানো সম্ভব হতো না। চিকিৎসক স্যাররা আমার শিশুদের জন্য যা যা প্রয়োজন সবই করেছেন। উনারা অনেক কষ্ট করেছেন। আমার সন্তানদের  চিকিৎসার জন্য সব খরচও দিয়েছেন তারা। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে  চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।সবার কাছে শিফা ও রিফার জন্য দোয়া চাই।