সারাবিশ্বডটকম অনলাইন ডেস্ক: সরকারের কর্মকাণ্ড মাঠ পর্যায়ে তরান্বিত করার পাশাপাশি নীতি নির্ধারণী ও উন্নয়ন কর্মসূচি বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিতে মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) থেকে শুরু হচ্ছে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন। এদিন সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারের সম্মেলনে জেলা প্রশাসকদের পক্ষ থেকে ২৪৫টি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছ।
রোববার (২২ জানুয়ারি) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। সম্মেলনে দেশের সকল জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনাররা উপস্থিত থাকবেন।
সূচি অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষ হবে। দ্বিতীয় অধিবেশন থাকবে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ, অর্থ বিভাগ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, পরিকল্পনা বিভাগের সঙ্গে। তৃতীয় অধিবেশনে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসবেন জেলা প্রশাসকরা। চতুর্থ অধিবেশন হবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে। এর পর সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নেবেন তারা।
দ্বিতীয় দিন ২৫ জানুয়ারি প্রথম অধিবেশন থাকবে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে। দ্বিতীয় অধিবেশনে কৃষি, খাদ্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং তৃতীয় অধিবেশনে পাট ও বস্ত্র, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, শ্রম ও কর্মসংস্থানের সঙ্গে জেলা প্রশাসকরা অংশ নেবেন। চতুর্থ অধিবেশন হবে শিল্প, বাণিজ্য ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং পঞ্চম অধিবেশন হবে দুদকের সঙ্গে। ষষ্ঠ অধিবেশনে সড়ক পরিবহন, সেতু, রেল এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়; সপ্তম অধিবেশনে স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং পাবর্ত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে জেলা প্রশাসকরা বসবেন। এদিন সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্ট ভবনে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে তাদের সৌজন্য সাক্ষাৎ রয়েছে। এদিন জাতীয় সংসদের স্পিকারের সঙ্গে নৈশভোজ রয়েছে।
সম্মেলনের তৃতীয় দিনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও সশস্ত্র বিভাগের সঙ্গে প্রথম অধিবেশন, প্রবাসী কল্যাণ, নৌ পরিবহন, পানি সম্পদের সঙ্গে দ্বিতীয় অধিবেশন; তথ্য ও সম্প্রচার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সঙ্গে তৃতীয় অধিবেশন; আইন, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চতুর্থ অধিবেশন; পররাষ্ট্র, স্বাস্থ্য সেবা, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণের সঙ্গে পঞ্চম অধিবেশন রয়েছে। ষষ্ঠ অধিবেশনে জননিরাপত্তা বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসবেন জেলা প্রশাসকরা। এদিন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সপ্তম এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অষ্টম অধিবেশন রয়েছে। শেষ দিনে সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিবের বক্তব্য ও নৈশভোজ রয়েছে। এর মধ্য দিয়েই এবারের জেলা প্রশাসক সম্মেলন শেষ হবে।
সম্মেলনে মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা মিলিয়ে মোট ৫৬টি প্রতিষ্ঠানের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সিনিয়র সচিব, সচিব, উপদেষ্টা এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে আলোচনা করবেন। সম্মেলনে জেলা প্রশাসকদের পক্ষ থেকে ২৪৫টি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রস্তাব এসেছে স্বাস্থ্য ও সেবা বিভাগ থেকে ২৩টি, ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে ১৫টি, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে ১৩টি, সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে ১১টি, গৃহায়ন ও গণপূর্ত থেকে ১০টি, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ থেকে ১০টি।
এবারের সম্মেলনে প্রধান আলোচ্য বিষয় থাকবে ভূমি ব্যবস্থাপনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম জোরদার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম জোরদার, স্থানীয় পর্যায়ে কর্ম সৃজন ও দারিদ্র বিমোচন কর্মসূচি বাস্তবায়ন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি বাস্তবায়ন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ই- গর্ভনেন্স, শিক্ষার মান উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ, পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ রোধ, ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও সমন্বয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে গত দুই বছর যথাযথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করা যায়নি। এবার প্রধানমন্ত্রী সশরীরে উপস্থিত থেকে এই সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। অন্যান্য বছরের মতো এবারও সম্মেলন সফল হবে। মাঠ প্রশাসনে কার্যক্রমে গতি পাবে।’
উল্লেখ্য, জেলা প্রশাসক সম্মেলনে মন্ত্রী ও সচিবদের উপস্থিতিতে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে নানা সুবিধা-অসুবিধা তুলে ধরেন জেলা প্রশাসকরা। এর বিপরীতে তাদের নানা দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসকরা মাঠ পর্যায়ে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। সেজন্য এই সম্মেলন এবং জেলা প্রশাসকদের প্রস্তাব বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।