
সারাবিশ্বডটকম আন্তর্জাতিক ডেস্ক: এ যেন চোখের পলকে যুক্তরাজ্যের শীর্ষ পদে ক্ষমতার রদবদল। আগামী ১০ দিনেরও কম সময়ের মধ্যে নতুন প্রধানমন্ত্রী পেতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্যবাসী। চলমান অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কোন্দলের জেরে দায়িত্ব গ্রহণের ৪৫ দিন পরই পদত্যাগ করতে বাধ্য হন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস। এরপর কনজারভেটিভ পার্টির নতুন নেতা এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কে হচ্ছেন, তা নিয়ে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে মুখোমুখি হতে পারেন সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী পেনি মর্ডান্ট। এর আগের নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বের দৌড়ে ট্রাসের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সুনাক। তাই পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে তিনি। তবে হাউস অব কমন্সের নেতা হিসেবে টোরি এমপিদের সঙ্গে বেশ ভালো সম্পর্ক থাকায় পেনি মর্ডান্টও বেশ সুবিধাজনক স্থানে রয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর লড়াইয়ে বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেশ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদ থেকে সদ্য পদত্যাগ করা সুয়েলা ব্র্যাভারম্যানের থাকারও আভাস মিলেছে। বরিস জনসনের নেতৃত্বাধীন সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন তিনি। ডানপন্থী টোরি আইনপ্রণেতাদের মধ্যে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। অন্যদিকে টোরি নেতাদের মধ্যে বেন ওয়ালেসকে নিয়ে বিভক্তি থাকায় ব্র্যাভারম্যান অনেকটা এগিয়ে।
তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তিনি গত জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারিত হন। তবে লিজ ট্রাসের পদত্যাগের পরপরই দলের অনেক নেতা বরিস জনসনের ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, কর কমানোর আশ্বাস দিয়ে যুক্তরাজ্যের ক্ষমতায় এসেছিলেন লিজ ট্রাস। ক্ষমতায় এসেই ‘মিনি বাজেট’ প্রণয়নসহ আরও কিছু অজনপ্রিয় অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নেন তিনি। প্রায় তিন সপ্তাহ আগে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে সংক্ষিপ্ত বাজেট ঘোষণা করেন সেই সময়ের অর্থমন্ত্রী কোওয়াসি কোয়ারটেং। এসব পদক্ষেপের কারণে বিরোধী দল ও নিজ দলের এমপিদের কাছেই বিতর্কিত হয়ে পড়েন তিনি। লিজের পদত্যাগ দাবি করেন অনেকে।
গত মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) ভুলের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চান লিজ ট্রাস, কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় না। বুধবার দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রাভারম্যান পদত্যাগ করলে নতুন সংকট দেখা দেয়। অবশেষে তীব্র চাপের মুখে বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) পদত্যাগের ঘোষণা দেন লিজ ট্রাস।
ফলে আবারও নতুন প্রধানমন্ত্রী পেতে চলেছে যুক্তরাজ্যবাসী। আগামী ২৮ অক্টোবরের মধ্যে একজন নতুন নেতা নির্বাচন করবে কনজারভেটিভ পার্টি। যিনি হবেন ছয় বছরে ব্রিটেনের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী।
২০১৬ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে যাওয়ার ভোটের পর থেকে ব্রিটিশ রাজনীতি কতটা অস্থির হয়ে উঠেছে তা বোঝাই যাচ্ছে। যুক্তরাজ্যে অর্থনৈতিক মন্দা ও মুদ্রাস্ফীতি ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এমন টালমাটাল পরিস্থিতি কে সামাল দিতে পারবেন, সেই অপেক্ষায় গোটা যুক্তরাজ্য।