সারাবিশ্বডটকম নিউজ: শরিফুল ইসলাম আলো ছড়ালেন। মেহেদী হাসান মিরাজের হাত থেকে ছুটলো বিষাক্ত স্পিন। নাসুম আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদ নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে সামর্থ্যের পরিচয় দিলেন আরেকবার। বোলারদের মিলিত পারফরম্যান্সে দুর্দান্ত সময় কাটালো বাংলাদেশ। গায়ানার প্রথম ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে একেবারেই সুবিধা করতে দেয়নি সফরকারীরা। নির্ধারিত ৪১ ওভারে ক্যারিবিয়ানরা ৯ উইকেটে করেছে ১৪৯ রান। বোলাররা তাদের কাজটা দারুণভাবে সেরেছেন। এবার পালা ব্যাটারদের দায়িত্ব তুলে নেওয়ার। জিততে বাংলাদেশকে করতে হবে ১৫০ রান। ভেজা আউটফিল্ডের কারণে দেরিতে খেলা শুরু হওয়ায় ম্যাচের দৈর্ঘ্য ৪১ ওভার। তাই জয়ের লক্ষ্যে ওভারপ্রতি সফরকারীদের করতে হবে ৩.৬৫ রান।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটারদের নিয়ে আক্ষরিক অর্থেই খেলেছেন বাংলাদেশের বোলাররা। শুরু থেকে আধিপত্য ধরে রেখে উইকেট তুলে নিয়েছেন তারা। সবচেয়ে সফল শরিফুল। দুই ওভারে দুইবার করে ২টি উইকেট তুলে নেন বাঁহাতি পেসার। সব মিলিয়ে ৮ ওভারে এক মেডেনসহ ৩৪ রান দিয়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট। মিরাজ ৯ ওভারে ২ মেডেনসহ ৩৬ রান খরচায় পেয়েছেন ৩ উইকেট। আর একটি উইকেট শিকার মোস্তাফিজের। তাদের দাপটের সামনে সর্বোচ্চ ৩৩ রান করেছেন শামারাহ ব্রুকস। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লোয়ার অর্ডারের অ্যান্ডারসন ফিলিপের। তার অপরাজিত ২১ ও জেডেন সিলসের অপরাজিত ১৬ রানে ভর করেই ১৪৯ রান করতে পেরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১১০ রানে নবম উইকেট হারানোর পর তারা টেনে নেন স্কোর।
টি-টোয়েন্টি সিরিজ বাজেভাবে হেরেছে বাংলাদেশ। ওয়ানডে ফরম্যাটে এসে ঘুরে তাই দাঁড়ানোর চেষ্টায় সফরকারীরা। সেই মিশনে গায়ানার প্রথম ওয়ানডেতে টস হেরে ফিল্ডিংয়ে নেমে শুরুতেই সাফল্য এনে দেন মোস্তাফিজুর রহমান। এই পেসারের চমৎকার ডেলিভারি ঠিকমতো খেলতে পারেননি শাই হোপ। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ক্যারিবিয়ান ওপেনারের পায়ে লেগে বল আঘাত করে স্টাম্পে। ফলে রানের খাতা না খুলেই বিদায় নিতে হয় তাকে।
শুরুতেই উইকেট হারানো ওয়েস্ট ইন্ডিজ ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। স্লো উইকেটে ছড়ি ঘোরাতে থাকেন দুই স্পিনার নাসুম আহমেদ ও মেহেদী হাসান মিরাজ। ওয়ানডে অভিষেক হওয়া নাসুমের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের পাশাপাশি মিরাজ কঠিন পরীক্ষা নেন ক্যারিবিয়ানদের। উইকেট আনন্দে মাততেও বেশিক্ষণ লাগেনি মিরাজের। বাংলাদেশের দ্বিতীয় উইকেট আসে তার হাত ধরেই। মিরাজের শিকার কাইল মায়ার্স। বাঁহাতি ওপেনারকে ক্লিন বোল্ড করে ফেরান প্যাভিলিয়নে। ফেরার আগে ২৭ বলে করে যান মাত্র ১০ রান।
স্বাগতিকদের মন্থর ব্যাটিং আরও মন্থর হয় মায়ার্সের বিদায়ে। তবে ধরে খেলে চাপ কাটানোর চেষ্টা করেন শামারাহ ব্রুকস ও ব্রেন্ডন কিংস। দাঁড়িয়েও গিয়েছিলেন দুজন। কিন্তু শরিফুলের জোড়া আঘাতে আবার এলোমেলো। এমনিতেই রান উঠছিল না স্কোরবোর্ডে, তার ওপর পরপর ২ বলে শরিফুল ২ উইকেট তুলে নিলে বিপদ আরও বাড়ে স্বাগতিকদের। টেস্ট মেজাজে ব্যাট করে ক্রিজে পড়ে ছিলেন কিং। তবে বেশি কিছু করতে পারেননি। শরিফুলের বলে ৩১ বলে মাত্র ৮ রান করে ধরা পড়েন বদলি ফিল্ডার এনামুল হকের হাতে।
বাঁহাতি পেসার পরের বলেই ব্রুকসকে ফিরিয়ে জাগিয়েছিলেন হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পথ দেখানো এই ব্যাটার ৩৩ রানে ধরা পড়েন উইকেটকিপার নুরুল হাসান সোহানের গ্লাভসে। ৬৬ বলের ইনিংসটি তিনি সাজান ৩ বাউন্ডারিতে। তাকে আউট করলেও হ্যাটট্রিকের আনন্দে মাতা হয়নি শরিফুলের। তাতে ৫৫ রানে হারায় ৪ উইকেট।
এরপর নিকোলাস পুরান ও রোভম্যান পাওয়েল আশা হয়ে ছিলেন। কিন্তু পাওয়েল মাত্র ৯ রানে বিদায় নেওয়ার কিছুক্ষণ পর পুরান আউট হলে সব আশা শেষ হয়ে যায়। ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক করেন ১৮ রান। এরপর আকিল হোসেন (৩), রোমারিও শেফার্ড (১৫) ও গুডাকেশ মোটিও (৭) পথ ধরেন প্যাভিলিয়নের। শেষ দিকে ফিলিপ-সিলসের অবিচ্ছিন্ন ৩৯ রানের জুটিতে দেড়শ ছুঁই স্কোর গড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৪১ ওভারে ১৪৯/৯ (ব্রুকস ৩৩, ফিলিপ ২১*, পুরান ১৮, সিলস ১৬*, শেফার্ড ১৫; শরিফুল ৪/৩৪, মিরাজ ৩/৩৬)।