চিনির বাজারে গোয়েন্দা

ছবি: সংগৃহিত।

সারাবিশ্বডটকম নিউজ ডেস্ক: অবশেষে চিনির বাজারে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। উৎপাদিত চিনি কোথায় যায়, কারা কী পরিমাণ চিনি আমদানি করছে, কী পরিমাণ বাজারজাত করছে, কাদের কাছে বিক্রি করছে, কতো পরিমাণ মজুদ করছে- গোয়েন্দারা এসব তথ্য সংগ্রহে মাঠে কাজ শুরু করেছেন। দেশের তিনটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা রাজধানীসহ দেশের বড় পাইকারি বাজারগুলোয় এ নিয়ে কাজ করছেন। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত গোয়েন্দাদের এ কার্যক্রম চলবে বলেও জানা গেছে।

ইতোমধ্যে দেশের সামগ্রিক বাজার পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে চিনির বাজার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার পরে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠকের একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।   

সূত্র জানিয়েছে, ঢাকার বাজারে ১০ দিনের ব্যবধানে খালা চিনির দাম কেজিতে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর বাজারে খোলা চিনির দাম বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। ঈদের আগে বাজারে প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম ছিল সর্বোচ্চ ১২৫ টাকা। খোলা চিনি কিছুটা পাওয়া গেলেও প্যাকেটজাত চিনি মিলছে না বাজারে।

মিলমালিকেরা বলছেন, দেশে চিনির কোনও সংকট নেই। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি। এ অবস্থায় গতকাল চিনিকলের মালিকেরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এক চিঠির মাধ্যমে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন চিঠিতে বলেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা চিনি আমদানি নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, বাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম ১২৫ থেকে ১৩৫ টাকা। বাজারে দেখা গেছে, প্রতি কেজি চিনি ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত মাসে সরকার প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম ১০৪ টাকা বেঁধে দিয়েছিল। সবশেষ গত ৬ এপ্রিল আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় দেশের বাজারেও সমন্বয় করতে তিন টাকা কমিয়ে খোলা চিনি ১০৪ ও প্যাকেটজাত ১০৯ টাকা নির্ধারণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে দাম কমানোর ঘোষণা দেওয়ার পরদিনই দাম আরও বেড়েছে।

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দেওয়া সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চিঠিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে প্রতি টন অপরিশোধিত চিনির দাম ৬৭৫ মার্কিন ডলার। অথচ এক মাস আগেও তা ছিল ৫২০ ডলার। এই বাস্তবতায় চিনি আমদানির ঋণপত্র খুলতে ‘ভীতির সম্মুখীন’ হচ্ছেন অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। কারণ, বর্তমান দামে চিনি আমদানি করলে তাতে প্রতি কেজিতে সব মিলিয়ে খরচ পড়বে ১৩১ টাকা।

চিনির বাজার পরিস্থিতি ও ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণে সম্প্রতি মিলমালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সরকারি নির্দেশনা সত্ত্বেও বাজারে মিলছে না নতুন দামের চিনি। রাজধানীর বাজারে কৃত্রিম সরবরাহ সংকট সৃষ্টি করে বাড়ানো হয়েছে চিনির দাম। খুচরা বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। ফলে দাম ক্রেতার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। গত কয়েক মাস ধরেই অস্থির চিনির বাজার। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না চিনির দাম। বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে প্যাকেটজাত ও খোলা চিনি। তারপরও সব দোকানে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না।

জানা গেছে, সংকটের কারণ খুঁজতে দেশব্যাপী অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। মিল মালিকরা আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি, ডলার সংকটে এলসি খুলতে না পারাসহ গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন কমে যাওয়ার কথা বলছেন। সংস্থার কর্মকর্তারা চিনি ব্যবসায়ী, মিল মালিক, খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে। কোনও অসাধু চক্র চিনি মজুত করছে কিনা, তা খতিয়ে দেখার জন্য গোয়েন্দা সংস্থাকে মাঠে তদারকির জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাওরান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মতিউর রহমান জানিয়েছেন, বাজারে নানা সংস্থার লোকজনই চিনি ও সয়াবিন তেল সম্পর্কে নানাবিধ তথ্য জানতে চায়। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে যেসব সমস্যা মোকাবিলা করছি তা জানাচ্ছি। আবার যেসব সুবিধা পাচ্ছি তাও তাদের জানাচ্ছি। তবে অনেকেই মজুদ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চায়, আমরা সবই জানাচ্ছি।

এদিকে জাতীয় ভোক্তা অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ শফিকউজ্জামান জানিয়েছেন, অপরিশোধিত চিনির মজুত আছে। পাইপলাইনে (আমদানির) চিনি আছে। চিনির কোনও ঘাটতি নেই।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর জানিয়েছে, চিনির বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণের মধ্যে উৎপাদন ও সরবরাহ কম, পাকা ভাউচার না দেওয়া, এলসি খোলার জটিলতা, মিল গেটে ট্রাকে চিনি লোডের ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় জটিলতা, ডলারের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব,  শুল্কহারের সমন্বয়, সাপ্লাই অর্ডারে একক মূল্য উল্লেখ না করা সমানভাবে দায়ী।