সারাবিশ্বডটকম নিউজ ডেস্ক: ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার একটি হাসপাতালে ভয়াবহ বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এ হামলায় অন্তত ৫০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া অনেকেই হাসপাতালের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন।
মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) রাতে মধ্য গাজার আল আহলি আরব হাসপাতালে এ হামলা চালানো হয় বলে গাজার শাসক গোষ্ঠী হামাস জানিয়েছে। হামলার শিকার হাসপাতালটিতে ইসরায়েলের হামলায় আহতসহ শত শত রোগী ভর্তি ছিলেন। এ ছাড়া বাস্তুচ্যুত হওয়া অনেক ফিলিস্তিনিও সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে গাজা কর্তৃপক্ষ। খবর আল জাজিরার।হামাসের গণমাধ্যম দপ্তর ইসরায়েলের এই হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আল জাজিরা জানিয়েছে, হামলার পর সেখানে বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। হাসপাতালে হামলার বিষয়ে ইসরায়েলের সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগেরি বলেছেন, কিছুক্ষণ আগে হামলার ঘটনাটি ঘটেছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।
এদিকে হাসপাতালে হামলার ঘটনায় ৩ দিনের শোক ঘোষণা করেছেন ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। এর আগে, গত ১১ দিন ধরে চলা ইসরায়েলি হামলায় গাজায় প্রায় ৩ হাজার মানুষের মৃত্যুর খবর জানিয়েছিল উপত্যকাটির কর্তৃপক্ষ। হামলায় অন্তত সাড়ে ১২ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন।
বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া
গাজায় হাসপাতালে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ। একে ‘গণহত্যা’ অভিহিত করে তিনি বলেন, এ পরিস্থিতিতে কেউ চুপ থাকতে পারে না। এভাবে সাধারণ মানুষকে হত্যা ‘মানবতার জন্য লজ্জাজনক’।
হাসপাতালে ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলায় শত শত মানুষের মৃত্যুকে ‘জঘন্য অপরাধ’ অভিহিত করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ইসরায়েলি বাহিনীর হাসপাতালে বোমা হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে কাতার। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রলায় বলেছে, ইসরায়েল যেভাবে গাজার হাসপাতাল, স্কুল ও জনবহুল এলাকায় হামলা করছে, এতে সংঘাত ভয়ংকরভাবে বিস্তৃত হচ্ছে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, ইসরায়েল যে ন্যূনতম মানবিক মূল্যবোধেরও তোয়াক্কা করছে না, গাজায় হাসপাতালে হামলা তার সর্বশেষ উদাহরণ। গাজায় ‘নজিরবিহীন নৃশংসতা’ বন্ধে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
গাজার আল–আহলি হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে মিসরও। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, গাজার বেসামরিক নাগরিকদের ওপর এভাবে নির্বিচার হামলা ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের চরম লঙ্ঘন’।
মিসরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল–সিসি বিবৃতি দিয়ে হাসপাতালে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘ইসরায়েলের এ হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’
গাজায় হাসপাতালে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইরানও। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ইসরায়েলি বাহিনী নির্বিচার বিমান হামলা চালিয়ে গাজার নিরস্ত্র ও অসহায় মানুষদের হত্যা করছে। জঘন্য এ অপরাধের মাধ্যমে ইহুদি রাষ্ট্রটি আরও একবার বিশ্বের সামনে তাদের অমানবিক ও পাশবিকাতেই তুলে ধরেছে।’
সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ও এ হামলাকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে নৃশংস, জঘন্য, রক্তক্ষয়ী গণহত্যাগুলোর একটি’ অভিহিত করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
গাজার হাসপাতালের হামলার নিন্দা জানিয়েছে আরব লীগও। সংস্থাটির প্রধান আহমেদ ঘেতি বলেছেন, বিশ্ব নেতাদের অবিলম্বে এ ‘ট্রাজেডি’ বন্ধ করতে হবে।