সারাবিশ্বডটকম আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গাজার এক নারী সাংবাদিক মারাম হুমাইদ তার সন্তানকে উদ্দেশ্য করে একটি হৃদয়বিদারক চিঠি লিখেছেন। যে চিঠিতে উঠে এসেছে গাজার নবজাতক শিশুদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের করুণ চিত্র।
হুমাইদ জানিয়েছেন, তার সন্তান ইলিয়াস তিন মাসে পা রাখল। আর ভাতিজা এজ কেবল একমাস পার করেছে। তিনি এই শিশুদের উদ্দেশ্য করে লিখেছেন, ‘আমার শিশুরা। আমি এই প্রত্যাশা নিয়ে এই চিঠি লিখছি যে, তোমরা নিরাপদ বিশ্বে বেড়ে উঠে এই চিঠি পড়বে। যদিও সেই ভবিষ্যত অনিশ্চিত। চলমান পরিস্থিতি আমাকে তোমাদের প্রজন্মের জন্য এই চিঠি লিখতে বাধ্য করেছে।’‘আমি তোমাদের চোখের দিকে তাকিয়ে আল শিফা হাসপাতালের থাকা শিশুদের মুখচ্ছবি কল্পনা করতে পারি। যাদেরকে সরিয়ে নেওয়ার নামে তাদের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলা হচ্ছে। এই নিষ্পাপ আত্মাদের জন্য বিশ্ব পরিণত হয়েছে গোরস্থানে। আমি ভাবছি সেইসব বাবা-মায়েদের যন্ত্রণার কথা, যারা স্থল অভিযানের কারণে তাদের সন্তানদের কাছে যেতে পারছে না। ভাবছি তাদের অবস্থা কেমন, যারা বাস্তুচ্যুত বা নিহত হয়েছে।’
‘আমার শিশুরা, অঝোরে কাঁদছে আমার হৃদয়। প্রতিদিন হাসপাতালে আমি কাঁদছি, এমন ভয়ংকর পরিস্থিতিতে শিশুদের বেড়ে ওঠা দেখে। আমি তখনো কাঁদি, যখন দেখি তাবুতে সরিয়ে নেওয়ার সময় এই শিশুরা হাসছে। যদিও তাদের চারপাশে ছড়িয়ে আছে কতো ট্র্যাজেডি। যে বাস্তবতা তারা ভবিষ্যতে দেখতে পারবে।’
‘এই শোকের পরিবেশে তোমাদের ভালো থাকার বিষয় আমাদের ভাবায় খুব। গত সপ্তাহে তোমার অবিরাম কান্না ও অস্বস্তি আমাদেরকে বেশ দ্বিধান্বিত করেছিল। পরে তোমার দাদি কারণটা খুঁজে বের করেছে। অপরিষ্কার পানির কারণে তোমার কিডনিতে ব্যথা করছিল। আমাদের সতর্কতা সত্ত্বেও কোনো উপায় নেই। আমরা চাইলেও তোমার জন্য পরিষ্কার পানি সবসময় সংগ্রহ করতে পারছি না।’
তিনি শিশুদের উদ্দেশে আরো লিখেছেন, ‘প্রত্যেক দিন হাসপাতালে আমি রক্তমাখা মরদেহ দেখি। যাদের মধ্যে আছে নারী, পুরুষ আর বয়স্করা। তবে সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ঘটনা হচ্ছে তাদের মধ্যে শিশুদের মরদেহ। শিশুরা এখানে শৈশবের সুরলহরির আগেই শোনে ক্ষেপণাস্ত্রের শব্দ।’
তিনি আরো লিখেছেন, ‘প্রিয় বাচ্চারা। এটা হতেও পারে আমার শেষ চিঠি। মনে রাখবে, যারা আমাদের এমন ভোগান্তিতেও চুপ করে আছে তাদের ক্ষমা করবে না। গাজার জীবন সবসময় চ্যালেজিং। তারপরও আমরা বাঁচার চেষ্টা করি, স্বপ্ন দেখি, বেড়ে উঠি। এখন আফসোস, আমরা তোমাদের জন্য সুন্দর ভবিষ্যত আনার স্বপ্ন দেখি।’
চিঠির শেষে ওই নারী সাংবাদিক লিখেছেন, ‘তোমাদের হাসি দেখি এবং এতোকিছুর পরও তোমাদের হাত ধরে রাখা আমার হৃদয় ভেঙে খান খান করে দেয়। এখানে ভালো ভবিষ্যতের আশা করাও ভয়ের। কারণ, ভবিষ্যত যে এখানে আরো অত্যাচারে প্রতিশ্রুতি নিয়ে অপেক্ষা করে।’
সূত্র: আল জাজিরা