সারাবিশ্বডটকম নিউজ ডেস্ক: খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বৈরাচারের দোসরদের বিভাজনের রাজনীতিঃ ছাত্র-শিক্ষকদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে স্বৈরাচারের প্রেতাত্মাকে গুপ্তভাবে বাঁচিয়ে রাখার অপকৌশল।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতি মুক্ত সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ভালোবাসার আবেগের ভালোবাসার একটি জায়গা। যেখানে নেই কোন অস্ত্রের মহড়া নেই নেই কোন হানাহানি। কিন্তু সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হলেন সরাসরি রাজনীতি করা একটি পরিবার থেকে যার পিতা সদ্য বিদায়ী হওয়া সরকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বাগেরহাট- ৪ আসনের এমপির একমাত্র সন্তান। যার বেড়ে ওঠাই রাজনীতি মধ্যে তিনিই তো রাজনীতি ভালো বুঝবেন!!!!!! সাধারন ছাত্র-ছাত্রীদের আবেগ নিয়ে তিনিই তো ভালো রাজনীতি করতে পারবেন। কারণ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তো ছাত্র নেতা নাই। কিছু বড়ভাই আছে যারা খু্বই আবেগপ্রবণ। এবার আসা যাক তার ভিসি হওয়ার পূর্র কিছু ইতিহাস জানি।
ড, মাহমুদ হাসান আজ থেকে প্রায় ২৫ বছর আগে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি এন্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনে যোগদান করেন সকল কিছুর দ্বিতীয় শ্রেনির রেজাল্ট নিয়ে। এমন কি একই সিন্ডিকেটে তার সাথে যারা যোগদান করেন তারও তিনমাস পরে তিনি যোগদান করেন কারণ তার মাস্টার্স এর রেজাল্ট ভেরিফিকেশনের কারনে।
এরপর তিনি শিক্ষাকতার পাশাপাশি শিক্ষক রাজনীতিতে যুক্ত হোন। সময়ের সাথে সাথে তিনি হয়ে উঠতে থাকেন একজন শিক্ষক নেতা। এক সময় দলীয় কারণে তিনি শিক্ষক রাজনীতি থেকে একটু ব্যাকফুটে যান। তার রাজনীতি আবার শুরু হয় বিগত খুলনা সিটি কর্পরেশনের মেয়র পদের নির্বাচনের সময়। তিনিসহ তার কিছু অজ্ঞাবহ শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী নিয়ে সরাসরি রাস্তায় নেমে মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের নির্বাচনী প্রচরণায় অংশ নেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক হয়ে কিভাবে সরাসরি স্থানীয় নির্বাচনে একটি বিশেষ দলের পক্ষে নির্বাচনী প্রচরণায় অংশ নেন সেটা জানার জন্য আমার আপনার পন্ডিত হতে হবে নিশ্চয়!!!!!!!!!!!
এরপর তিনি উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ পেলেন এবং তার সাথে যে সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী রাজনীতি করেন বেছে বেছে তাদেরকে তার পছন্দের চেয়ারে বসান। তার উদাহরণ তার বর্তমান পিএস তারই অজ্ঞাবহ বিশ্বস্থ ছাত্র এবং তার আন্ডারে পিএইচডি স্টুডেন্ট। এছাড়া্ও তার বর্তমান সময়ে নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রেও তিনি ফলো করেছেন আওয়ামী সরকারের নীতিই।
তার কিছু অনুসারী দাবী করেন তিনি বিশ্বের অন্যতম গবেষক। কিন্তু আপনারা কি জানেন তার কিছু অনুসারীরা যে AD Index –এর কথা বলেন। এই AD Index টাই আসলে একটা ভুয়া জিনিস।
এবার শুরু হয় তার আসল রাজনীতি। সারাদেশে যখন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলে তখন ১৬ জুলাই সরকার সকল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষনা করেন এবং ছাত্রদের হল ত্যাগের নির্দশ প্রদান করেন। শিক্ষার্থীরা হল ত্যাগ না করতে চাইলে তার অজ্ঞাবহ ছাত্রবিষায়ক পরিচালকের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগে বাধ্য করায়। শিক্ষার্থীরা অনিরাপদ অবস্থায় খুলনার শহরে আশ্রয় নেয়। এরপর আন্দোলন যখন তুঙ্গে ম্যাথ ডিসিপ্লিনের ১৯ ব্যাচের স্টুডেন্ট মীর মুগ্ধ আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহীদ হোন। কিন্তু সেই মুগ্ধের মৃত্যও তাকে আওয়ামীবাদের তারণা থেকে বের করতে পারেনি। মুগ্ধর মৃত্যুর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন প্রকার শোক বার্তা পর্যন্ত দেযনি। এর মধ্যেও তিনি ৫ আগষ্ট শেখ কামালের জন্মদিন ও ৮ আগষ্ট শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিন পালনের জন্য রেজিস্ট্রারের কার্যালয় হতে পত্র জারি করেন। এছাড়াও যখন এই স্বৈরাচার হাসিনা সরকার বিদায় নেয় তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট হাউজ থেকে ছাত্রলীগের দুজন কর্মীকে শিক্ষার্থীরা হাতে নাতে ধরে। একটি ছাত্র রাজনৈতিকমুক্ত ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কর্মীকে ক্যাম্পাসের ভিতরে গেস্ট হাউজে আশ্রয় দেওয়া নিশ্চয় আওয়ামী রাজনীতি থেকে বের হওয়ার লক্ষণ নয়।
খুলনাতে যখন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন তুঙ্গে তখন বেশ কয়েকজন শিক্ষক ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে এসে দাড়ায়। কিন্তু তিনি বা তার কোন অজ্ঞাবহ শিক্ষক, কর্মকর্তা তাদের পাশে এসে দাড়ায়নি। কিন্তু হঠাৎ শিক্ষার্থীরা পুলিশের দ্বাড়া হামলার শিকার হলে তার কিছু অজ্ঞাবহ শিক্ষক, কর্মকর্তা ছাত্রদের মাঝে প্রচার করতে থাকে আমিই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় যদি তিনি শিক্ষার্থীদের সকল কর্মসূচীতে বলতেন আমিই প্রশাসন আমিই তোমাদের দেখবো। তখনই না বোঝা যেন আপনি সরকার দলীয় পরিচয়ের উর্ধ থেকে ছাত্রদের সাথে একত্মা ঘোষনা করেছেন।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ট্রেজারার অমিত রায় চৌধুরী কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে অগ্রাধিকার দিয়েছেন স্বৈরাচারের দলীয়করণকে এবং উনার ধর্মীয় বিশ্বাসকে। স্বৈরাচার এর আমল থাকায় এবং স্বৈরাচারের নিযুক্ত উপাচার্য থাকায় এর কোন প্রতিবাদ করা যায়নি। আজ স্বাধীন দেশে এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রতিবাদ করলে যদি উপাচার্য চাপ মনে করেন, তাহলে আপনাদের কাছে প্রশ্ন থাকলো এই উপাচার্য কি ওইসব নিয়োগের দায়ভার থেকে মুক্তি পেতে চান।
এমনকি বর্তমান উপাচার্য তার অজ্ঞাবহ মানুষ ছাড়া কাউকে নিয়োগও দেননি বা প্রশাসনের দায়িত্বশীল পদেও বসাননি।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সব সময় শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের মাঝে একটি আবেগের, শ্রদ্ধার সম্পর্ক ছিল, যা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কে একটি পরিবারে পরিণত করেছে। স্বৈরাচার হাসিনা যেমন বাংলাদেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছেন, তেমনি এই উপাচার্য এবং তার দোসররা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে, ছাত্রদের আবেগকে কাজে লাগিয়ে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের মুহূর্তে ছাত্র শিক্ষকদের বিভাজিত করে দিতে চাচ্ছেন। যা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যের সাথে যায় না, যা এই যে ছাত্র-জনতার আন্দোলন তার সাথে সমার্থক নয়। জুলাই ২০২৪ এর ছাত্র-জনতার আন্দোলন ছিল স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে, সেখানে শুধুমাত্র কিছু মিথ্যাচার এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারের মাধ্যমে গুপ্ত স্বৈরাচারের দোসরদের ষড়যন্ত্রে স্বৈরাচার নিযুক্ত উপাচার্যকে বহাল রেখে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কে আমরা এখনো স্বৈরাচারের আবাস হিসেবে কি দেখতে চাই? এই দোসররা মিথ্যাচার করছেন যে শিক্ষকরা স্বৈরাচার নিযুক্ত এই উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়েছেন, তারা এই কথা কখনোই উপাচার্যকে বলেননি। স্বৈরাচার বিরোধী এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে যে কোন ষড়যন্ত্র হতে পারে এই সকল স্বৈরাচার নিযুক্ত উপাচার্য বা ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে। তাই বিজয় সুসংহত রাখতে এবং সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিতে স্বৈরাচারের এজেন্ট এই উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেনের পদত্যাগ।