সারাবিশ্বডটকম অনলাইন ডেস্ক: কোম্পানির নামে জমি কেনা ও নামজারির বিষয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। প্রথমত, কোম্পানির বিদ্যমান প্রকল্পভুক্ত কোনো জমির নামজারি পেন্ডিং থাকলে সে বিষয়ে প্রকল্পের অ্যালাইনমেন্ট বা পূর্ণাঙ্গ নকশা ডিসির কাছে আবেদনসহ জমা দিতে হবে। অপরদিকে নতুন করে জমি কেনাসহ নামজারির সম্ভাব্য জটিলতা দূর করতে ‘ওয়ানস্টপ সার্ভিস’ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করছে মন্ত্রণালয়। এজন্য শিগগিরই আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক আহ্বান করা হবে। সোমবার সকালে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এ সংক্রান্ত সভায় এসব সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
বৈঠক শেষে ভূমি সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান পিএএ যুগান্তরকে বলেন, কোম্পানির অনুমোদিত প্রকল্পভুক্ত বা চালু শিল্পকারখানার কেনা জমির নামজারি পেন্ডিং থাকলে সংশ্লিষ্ট ডিসির কাছে প্রকল্প এলাকার মোট জমির বিস্তারিত অ্যালাইনমেন্ট বা নকশা জমা দিতে হবে। এরপর জেলা প্রশাসক (ডিসি) অ্যালাইনমেন্টের মধ্যে খাসজমি, অর্পিত সম্পত্তি এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের তর্কিত জমি আছে কি না, সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন। এরপর বাস্তবতার নিরিখে আইনি কাঠামোর মধ্যে ডিসি আবেদনকারীর আবেদন নিষ্পত্তি করবেন। তবে সেটি হতে হবে গ্রহণযোগ্য সময়ের মধ্যে। অযথা সময়ক্ষেপণ করে কাউকে হয়রানি করা যাবে না। ডিসি আবেদন নিষ্পত্তি করে সংশ্লিষ্ট এসি ল্যান্ডের কাছে নামজারির জন্য পাঠিয়ে দেবেন। এসি ল্যান্ড যথাসময়ের মধ্যে নামজারির ব্যবস্থা করবেন। এ বিষয়ে দ্বিতীয় দফায় ডিসির কাছে আর যেতে হবে না। তিনি বলেন, এটি হলো কোম্পানির কোনো প্রকল্প বা শিল্পকারখানার জমির পেন্ডিং নামজারির বিষয়ে ডিসির করণীয়। অপরদিকে, যেসব জমি নতুন করে কেনা হবে তার পূর্বানুমতি ও নামজারি আরও সহজীকরণের বিষয়ে খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে। বর্তমানে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় ও ডিসির এখতিয়ারসংশ্লিষ্ট একাধিক বিধিবিধান রয়েছে। পাশাপাশি পূর্ত মন্ত্রণালয় ও রাজউকের হাতেও রয়েছে বেশকিছু আইন ও বিধিবিধান। এক্ষেত্রে সাংঘর্ষিক কোনো বিষয় যেন সামনে না আসে, সেবাপ্রার্থী জনগণের যাতে কোনো প্রকার দুর্ভোগ না হয় এবং সরকারের স্বার্থও ক্ষুণ্ন না হয়, সেজন্য ভূমিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে শিগগিরই আন্তঃমন্ত্রণালয়ের মিটিং ডাকা হবে। ওই বৈঠকে পূর্ত মন্ত্রণালয় ও রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সমন্বিত ও কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে ভূমি সচিব বলেন, ‘আমাদের তথা সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য হলো কীভাবে জনগণকে কম সময়ের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া যায়। এজন্য এক্ষেত্রে আমরা ‘ওয়ানস্টপ সার্ভিস’ দিতে চায়। কোম্পানির জমি কেনার পূর্বানুমতি ও নামজারির ক্ষেত্রে ডিসি এবং এসি ল্যান্ডের কাছে আবেদনকারী শুধু একবারই যাবেন। যাতে দ্বিতীয় দফায় যেতে না হয় এবং আইন ও বিধিগত সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে নাগরিকের অধিকার শতভাগ নিশ্চিত করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এমন পদ্ধতি ঠিক করে দেব, যেখানে হয়রানি কিংবা দুর্নীতি করার কোনো সুযোগই থাকবে না।’
ভূমি সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ঢাকার ডিসি মোহাম্মদ মমিনুর রহমান, এডিসি (রাজস্ব) মো. শিবলী সাদিকসহ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টির সঙ্গে ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে জারি করা বেশকিছু দিকনির্দেশনা রয়েছে। এছাড়া গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ২০০৬ সালের (সংশোধিত) বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন বিধিমালাও আছে। দেখা যাচ্ছে, এ বিধিমালার আওতায় রাজউক থেকে প্রকল্পের অনুমোদন নিয়ে জমি কিনে থাকলে সেখানে নতুন করে অন্য বিধির আওতায় কোনো প্রশ্ন তুলতে গেলে জটিলতা বাড়বে। এজন্য একই বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে ‘কমন বিধিনিষেধ’ বা নির্দেশনা দিলে সবকিছু সহজে সমাধান হবে। ভূমি মন্ত্রণালয় এখন সেদিকেই এগোচ্ছে। তবে এখানে ডিসিসহ কারও অর্জিত অধিকার বা এখতিয়ার ক্ষুণ্ন করা হবে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সোমবার ভূমি সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কোম্পানির জমি রেজিস্ট্রি ও নামজারির ক্ষেত্রে সহজীকরণকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আরও সহজীকরণ পদক্ষেপ নেওয়া বলে কোম্পানির জমির রেজিস্ট্রি ও নামজারি এখন থেমে থাকবে না। বিদ্যমান আইনি কাঠামোর মধ্যে জমি রেজিস্ট্রি ও নামজারি স্বাভাবিকভাবে চালু থাকবে। কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সেই বিষয়ে ডিসিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, কোম্পানির জমি রেজিস্ট্রি (নিবন্ধন) ও নামজারির ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধের কথা উল্লেখ করে ১৪ নভেম্বর ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. শিবলী সাদিকের স্বাক্ষরে একটি ইনহাউজ চিঠি ইস্যু করা হয়। চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয় ঢাকা জেলার সব এসি ল্যান্ডকে (সহকারী কমিশনার, ভূমি)। এর আগে একই বিষয়ে গত বছর ২০ জানুয়ারি গাজীপুরের ডিসি আনিসুর রহমান চিঠি ইস্যু করে জেলার সব সাব-রেজিস্ট্রারকে প্রতিপালনের জন্য অবহিত করেন। কিন্তু ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল ১৯৯০-এর ৩২৭নং অনুচ্ছেদের উ™ৃ¬তি দিয়ে ইস্যু করা এ দুটি চিঠি নিয়ে জনহয়রানি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করা হচ্ছে বলে ব্যাপক অভিযোগ ওঠে। কোম্পানির কেনা জমির নামজারি এবং নতুন করে জমি কিনতে ডিসির কাছ থেকে পূর্বানুমতি নিতে নানামুখী ভোগান্তিতেও পড়তে হচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে অলিখিত ঘুস চাওয়ার অভিযোগ রয়েছে।