কাজে আসেনি ট্রাম্পের মুচকি হাসি!

অনলাইন ডেস্ক : বেশ ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ভিয়েতনামের হ্যানয়ে দ্বিতীয় বৈঠকে বসেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কেরিয়ার নেতা কিম জং উন। কিন্তু ভিয়েতনাম থেকে দু’জনই শূন্য হাতে ফিরেছেন। খবর পার্সটুডের
দ্বিপক্ষীয় এই শীর্ষ বৈঠকের বিষয়ে প্রথম থেকে আগ্রহটা ট্রাম্পেরও বেশি ছিল। যে উনকে আমেরিকা সব সময় স্বৈরাচার হিসেবে গালি দিয়ে এসেছে সেই উনের উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় বহু বার মেতেছেন ট্রাম্প। এসব দেখে মনে হচ্ছিল উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে একটা মিটমাট করেই ছাড়বেন ট্রাম্প। কিন্তু হ্যানয় বৈঠক থেকে এর উল্টো ইঙ্গিতই পাওয়া গেল। ট্রাম্প কোনো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করেই উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক স্থাপনাগুলো বন্ধে উনকে রাজি করাতে চেয়েছিলেন।
ট্রাম্প বলেছিলেন, পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ শেষ হলে উত্তর কোরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে। কিন্তু উন তাতে রাজি হন নি। ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, উত্তর কোরিয়া সব নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।
কিন্তু উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রি ইয়ং হো মার্কিন ওই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, বৈঠকে উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে আংশিক অবরোধ প্রত্যাহারের দাবি করা হয়েছিল। পুরোপুরি প্রত্যাহার নয়। বৈঠকের পর ট্রাম্প সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে অনেক বেশি দাবি করা হয়েছে। এ কারণে তিনি চুক্তি করেন নি। অবশ্য ট্রাম্প অহরহই মিথ্যা বলেন।
২৭ ও ২৮ ফেব্রুয়ারির হ্যানয় বৈঠকের আগে ট্রাম্প ও উন গত জুনে সিঙ্গাপুরে প্রথম বৈঠক করেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়া স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয়। অন্যদিকে উত্তর কোরিয়া ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু পরীক্ষা বন্ধ রাখে। সে সময় বলা হয়েছিল উত্তর কোরিয়া নিরস্ত্রীকরণ কার্যক্রমও শুরু করেছে।
নিরস্ত্রীকরণ কার্যক্রম সত্যিই শুরু হয়েছিল কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া না গেলেও গোটা বিশ্বই যা দেখেছে তাহলো, উত্তর কোরিয়া ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু পরীক্ষা বন্ধ রেখেছে। কিন্তু আমেরিকা জুনে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যে যৌথ মহড়া স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছিল সেই মহড়া তারা নভেম্বরে এসে ঠিকই চালিয়েছে। এর পাশাপাশি আমেরিকা উত্তর কোরিয়ার ওপর থেকে কোনো নিষেধাজ্ঞাই শিথিল করে নি।
প্রথম বৈঠকের পর থেকেই উত্তর কোরিয়া বলে আসছিল, নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে হবে। সম্পর্কের উন্নয়ন ও নিষেধাজ্ঞা একসঙ্গে চলতে পারে না। ট্রাম্পের সঙ্গে প্রথম বৈঠকের পর উত্তর কোরিয়া ট্রাম্পের কাছ থেকে মিষ্টি মিষ্টি কথা ছাড়া কার্যত নগদ কিছুই পায় নি। উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতার কিছু প্রমাণ পাওয়া গেলেও আমেরিকার পক্ষ থেকে উত্তর কোরিয়াকে কোনো ছাড়ই দেওয়া হয় নি।
এছাড়া ইরানের সঙ্গে পরমাণু সমঝোতাসহ আরও কয়েকটি আন্তর্জাতিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়ে ট্রাম্প যে অন্যায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তাতে তার ওপর আর কেউই আস্থা রাখতে পারে না। এসবের বাইরেও বিভিন্ন ইস্যুতে ঘরে-বাইরে ট্রাম্পের বেপরোয়া পথচলাতো রয়েছেই।
ট্রাম্প ভেবেছিলেন মিষ্টি কথা আর মুচকি হাসিতে অল্প বয়সী উনকে সহজেই বাগে আনতে পারবেন তিনি। কিন্তু হ্যানয় বৈঠকে উন প্রমাণ করেছেন যে, অন্তত ট্রাম্পের মতো ব্যক্তির ধোঁকায় পড়ার মতো ব্যক্তি তিনি নন।