সারাবিশ্বডটকম নিউজ ডেস্ক: বিভিন্ন ব্যক্তির অজান্তে অভিনব কৌশলে ফিঙ্গার প্রিন্ট ও বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) বিপরীতে মোবাইল ফোনের সিম অ্যাক্টিভ করতো একটি চক্র। পরে এসব সিম বিভিন্ন অপরাধীর কাছে বেশি দামে বিক্রি করা করতো চক্রটি।
অপরাধীরা এসব সিম কিনে নিয়ে বিভিন্ন অপরাধ ও প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড করছে। এছাড়া তারা মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে সেগুলো অনলাইনে বিক্রিও করে। চক্রের সদস্যরা অনলাইনে ব্যক্তিগত তথ্য কেনাবেচার হাটও তৈরি করেছিল। এভাবে গত কয়েকবছর ধরে এসব কর্মকাণ্ড করে তারা লাখ লাখ টাকা হাতিয়েছে। পরে এসব অভিযোগের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ এ চক্রের ৮ জনকে গ্রেফতার করে। গত ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগরীসহ কুড়িগ্রাম ও রংপুর থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করে ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।গ্রেফতার আটজন হলো, মো. মাসুদ (২২), মেহেদী হাসান (২৪), আল আমিন মিয়া (২৬), আরাফাত রহমান (২৩), নুর আলম (২৪), ইমন হোসেন (২৫), সোহেল রানা (৩৬) ও মো. শাকিল (২৫)। তাদের মধ্যে সোহেল রানা ও মো. শাকিল অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। বাকিরা এইচএসসি পাস। পেশায় সবাই চাকরিজীবী।
গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের কাজে ব্যবহৃত একটি মোবাইল অ্যাপস, ৮০০টি বিশেষ পদ্ধতিতে সংগ্রহ করা বিভিন্ন ব্যক্তির ফিঙ্গারপ্রিন্টের অনুলিপি, বিভিন্ন ব্যক্তির বায়োমেট্রিক তথ্য ব্যবহার করে রেজিস্ট্রেশন করা ১১০টি অ্যাক্টিভ সিম, ২টি কম্পিউটার, ৫টি মোবাইল ফোন, ৩টি ফিঙ্গার স্ক্যানার, একটি গ্লুগান জিটি-১০ মেশিন ও অপরাধমূলক কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন অ্যাপস।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, গ্রেফতার মো. মাসুদ এইচএসসি পাস করে বাংলালিংকে এসআর পদে চাকরি নেন। প্রযুক্তিবিদ্যায় পারদর্শী হওয়ায় বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান যেমন, রবি, বাংলালিংক এবং বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ আ্যপসের এপিআই সংগ্রহ করে অপর সহযোগী সফটওয়্যার ডেভেলপার মেহেদী হাসানের কাছে সরবরাহ করতেন। তাকে দিয়ে টিকটক প্রো যা ডিজিটাল প্রো সার্ভিস নামে পরিচিত একটি বিশেষ অ্যাপস তৈরি করা হয়। এছাড়া মাসুদ তার কাছে সিম কেনা ও রিপ্লেস করতে আসা ব্যক্তিদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট তথা বায়োমেট্রিক তথ্য বিশেষ কৌশলে ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করে রেখে দিতেন। ওই ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে সিম অ্যাক্টিভ করে অপরাধী চক্রের কাছে প্রতিটি সিম দেড় থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি করতেন। মাসুদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহের কাজে বাংলালিংকে এসআর পদে চাকরি করা ইমন হোসেন, সোহেল রানা ও শাকিল সহযোগিতা করতেন।
গ্রেফতার মাসুদ, ইমন হোসেন, সোহেল রানা ও শাকিল এমএন টেডার্স (বাংলালিংক হাউজ) এ এসআর পদে চাকরি করতেন। আসামিরা সিম রিপ্লেস ও কিনতে আসা ব্যক্তিদের হাত পরিষ্কার করার নামে বিশেষ একটি রাবারের সাদৃশ্য বস্তুতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে গ্লু-গানের সহায়তায় ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করে সংরক্ষণে রাখতেন। পরে রাবারের সংরক্ষণ করা বিভিন্ন ব্যক্তির ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে ওই ব্যক্তিদের অজান্তে এনআইডির বিপরীতে সিম অ্যাক্টিভ করে বিভিন্ন অপরাধী-প্রতারকদের কাছে বেশি দামে বিক্রয় করেন। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির ৮০০ আঙ্গুলের ছাপ পাওয়া গেছে।
ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) জুনায়েদ আলম সরকার বলেন, চক্রটি কৌশলে মানুষের আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে সেগুলো দিয়ে সিম বায়োমেট্রিক করে অপরাধীদের কাছে ১৫০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা দামে বিক্রি করতেন। এছাড়া টিকটক প্রো নামের একটি বিশেষ অ্যাপস তৈরি করে রবি, জিপি, টেলিটক, বাংলালিংক ও এনআইডির এপিআই সরবরাহ করেন। চক্রের অনেক সদস্য বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানিতে চাকরি করেন। এই সুযোগে তারা বিভিন্ন জনের এনআইডি তথ্য ও জন্ম তারিখ সংগ্রহ করে এসব তথ্য বিক্রি করেন।